‘ওয়াজহুন্’ অর্থ মুখমণ্ডল, বস্তুটি স্বয়ং, উদ্দেশ্য; এমন কাজ যাহাতে সমস্ত মনোযোগ নিবদ্ধ হয়, ঈপ্সিত পথ, অনুগ্রহ (আকরাব)। এই আয়াতটি পরিপূর্ণ আধ্যাত্মিকতার তিনটি স্তরের প্রতি প্রসঙ্গতঃ ইঙ্গিত করিতেছে। যথা ‘ফানা’ (আত্ম-বিলীন অবস্থা), ‘বাকা’ (পুনরুজ্জীবন), ‘লিকা’ (আল্লাহ্র সাথে মিলন)। ‘আল্লাহ্র কাছে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ’ দ্বারা ইহাই বুঝায় যে, আমাদের সমস্ত শক্তি সামর্থ্য, দেহ-মন এবং আমাদের যাহা কিছু আছে — সবকিছুই আল্লাহ্র কাছে সমর্পণ করিয়া একমাত্র তাঁহারই সেবায় ন্যস্ত করা। এই অবস্থার নাম ‘ফানা’ বা মৃত্যু, যাহা একজন সত্যিকার মুসলমান নিজের উপর আনয়ন করিয়া লয়। দ্বিতীয় বাক্যাংশ ‘সে সৎকর্মে সর্বদা নিয়োজিত থাকে’-‘বাকা’ বা পুনরুজ্জীবনের অবস্থার দিকে ইঙ্গিত করিতেছে। কেননা, যখন কোন ব্যক্তি আল্লাহ্র ভালবাসায় নিজেকে বিলীন করিয়া দেয় এবং তাহার পার্থিব আশা-আকাঙ্খা ও কামনা-বাসনা সব নির্বাপিত হইয়া যায় এবং এক প্রকার মৃত্যুবরণ করে, যেমন আঁ-হযরত (সাঃ) বলিয়াছেনঃ মূতূক্বাবলা আল্ তামূতূ–অর্থাৎ মৃত্যু বরণ করার পূর্বে মৃত্যুবরণ কর, তখন তাহাকে এক নব-জীবন দান করা হয় যাহাকে ‘বাকা’ নামে অভিহিত করা হয়। তখন সে আল্লাহ্র জন্যই বাঁচে এবং মানুষের সেবায় আত্ম-নিয়োগ করে। আয়াতের শেষ শব্দগুলি তৃতীয় ও উচ্চতম অবস্থা ‘লেকা’ বুঝাইতেছে, যেখানে সে আল্লাহ্র সাথে মিলিত হয়। এই শেষ অবস্থার অপর নাম ‘নফস্ মুৎমায়িন্নাহ্’(শান্তি-প্রাপ্ত আত্মা) (৮৯ঃ২৮)।