১০১

এখন ঐ ঝরণাগুলির চিহ্ন পর্যন্ত সেখানে নাই। কিন্তু তাহাতে আশ্চর্য হইবার কিছুই নাই। কেননা, এখনও সুনির্দিষ্টভাবে জ্ঞাত হওয়া যায় নাই, কোন স্থানটি দিয়া মূসা (আঃ) এই ভ্রমণটি সম্পন্ন করিয়াছিলেন। তাহা ছাড়াও, সাধারণ অভিজ্ঞতা হইতেও দেখা যায়, ধীরে ধীরে ঝরণা ধারার উৎসমুখ বন্ধ হইয়া যায়। এখানে বর্ণিত ঘটনা, হাজার হাজার বৎসর পূর্বে ঘটিয়াছিল। ইহাও জানা কথা যে, সময় সময় ঝরণা হঠাৎ করিয়া প্রবাহিত হইয়া আবার বন্ধ হইয়া যায়, এমনকি শুষ্ক হইয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রে এমনভাবে শুকাইয়া যায় যে, ঝরণার চিহ্নও সেখানে থাকে না। বলা হইয়াছে যে, পঞ্চদশ শতাব্দীতেও বারটি ঝরণা সেখানে প্রবাহিত ছিল। “পাহাড়টি আরব দেশের সীমানার মধ্যেই অবস্থিত এবং তাঁহার (মুহাম্মদ সাঃ) স্বদেশ বাসীরা তাহা দেখিয়াছেন, যদিও তিনি স্বয়ং হয়তো উহা দেখেন নাই, ইহা অধিক সম্ভব যে, তিনি (সাঃ) স্বয়ং উহা দেখিয়াছেন। মোট কথা, কার্যতঃ তাঁহার কথা সঠিক বলিয়াই মনে হয়। কেননা, পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ দিকে এক ব্যক্তি ঐ অঞ্চল ভ্রমণ করিয়া আসিয়া বলিয়াছিলেন যে, তিনি স্বয়ং একটি বিরাট পাথর হইতে ১২টি স্রোতধারা নির্গত হইতে দেখিয়াছিলেন। ইসরাঈলের ১২টি গোত্রের সংখ্যার সহিত এই সংখ্যার মিল আছে” (আল্-কোরান, সেইল অনুদিত, পৃষ্ঠা-৮)। হযরত মূসা (আঃ) এর সঙ্গে বনী ইসরাঈলের বারটি গোত্র ছিল, তাই আল্লাহ্‌তা’লা বারটি ঝরণাও প্রবাহিত করিয়াছিলেন। কারণ একটি ঝরণা তাহাদের প্রয়োজন মিটাইতে পারিত না, কেননা তাহাদের সংখ্যা ছিল অনেক বাইবেলের মতে তাহাদের সংখ্যা ছিল ছয় লক্ষ (গণনা পুস্তক- ১ঃ১৪৬)। মূসা (আঃ)-এর মুজেযা এই কথার মধ্যে নিহিত নহে যে, তিনি ঐ সময়ে প্রকৃতির নিয়ম-কানুন বিরুদ্ধ ঘটনা ঘটাইয়াছিলেন। বরং তাহার মুজেযা বা অলৌকিকতা এই কথার মধ্যেই নিহিত যে, আল্লাহ্‌তা’লা ঐ নির্দিষ্ট স্থানটি তাঁহার কাছে প্রকাশ করিয়া লাঠিদ্বারা আঘাত করিবার জন্য নির্দেশ দিয়াছিলেন যেখানে পানি প্রবাহিত হইবার জন্য প্রস্তুত ছিল। ইহা ভূ-তাত্ত্বিকদের কাছে সুবিদিত যে, সময় সময় পাহাড়ের বা প্রস্তরের অল্প নীচেই পানির ঝরণা প্রবাহিত হইয়া থাকে এবং ভারি বস্তু বা চোখা বস্তু দ্বারা আঘাত করা মাত্র পানি সজোরে বাহির হইতে থাকে। “ইয্‌রিব বি আসাকাল হাজারা” বাক্যের অর্থ ইহাও হয় যে, “তাড়াতাড়ি তোমার সম্প্রদায়কে নিয়া প্রস্তরটার নিকট যাও”। “আসা” রূপক অর্থে সম্প্রদায়কে বুঝায়, ‘ইয্‌রিব’ রূপকভাবে ‘তাড়াতাড়ি যাও’ বুঝায়। আরবীতে বলা হয়, ‘যারাবাল আরযা’ অথবা ‘যারাবা ফিল আরযে’ যার অর্থ হয়, সে তাড়াতাড়ি ভূমিতে দৌড়িল (লেইন)।