এই আয়াতের প্রার্থনাটি অপূর্ব! ইহা এত পূর্ণ ও সার্বিক যে, মানুষের সকল প্রকার প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া, প্রার্থনাটি শিখানো হইয়াছে। জাগতিক ও আধ্যাত্মিক, ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ-প্রাপ্তির চির-আকুতিকে এই প্রার্থনাটির প্রতি শব্দেই রূপায়িত করা হইয়াছে। ইহার চাইতে পূর্ণতর, উচ্চতর ও গভীরতর প্রার্থনা কল্পনায় আসিতে পারে না। বিশ্বাসীর মন আকুতি জানায় সরল-সুদৃঢ় পথ পাওয়ার জন্য, যে পথ সর্বাপেক্ষা স্বল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাইয়া দিবে। কখনও কখনও এমন হয়, যে মানুষকে সোজা সঠিক পথটিকে কিছু দূরত্ব হইতে দেখাইয়া দেওয়া হয়, কিন্তু তাহাকে আগাইয়া নিয়া ঐ পথে চালাইয়া দেওয়া হয় না। আর অগত্যা যদি চালাইয়া দেওয়াও হয় তথাপি সে শেষ পর্যন্ত ইহাতে স্থির থাকিতে পারে না বরং অন্য পথ ধরিয়া ফেলে। তাই মো’মেন বা বিশ্বাসী ব্যক্তি প্রার্থনা করে, আমাকে সরল-সুদৃঢ় পথ দেখাও এবং আমাকে ঐ পথে লইয়া গিয়া উহাতে চালাইতে থাক, যে পর্যন্ত না আমি সঠিক গন্তব্যে পৌঁছিয়া যাই—হেদায়াত শব্দের মধ্যেই এই তাৎপর্য রহিয়াছে। ‘হেদায়াত’ শব্দের অর্থ হইল সঠিক সোজা রাস্তা দেখানো (৭০ঃ১১), সেই রাস্তায় পৌঁছাইয়া দেওয়া (২৯ঃ৭০) এবং শেষাবধি সেই রাস্তায় চালাইয়া নেওয়া (৭ঃ৪৪), (মুফরাদাত এবং বাকা)। বস্তুতঃ মানুষ প্রতিটি পদক্ষেপেই আল্লাহ্র সাহায্যের মুখাপেক্ষী। তাই এই প্রার্থনাটি আল্লাহ্র কাছে প্রতিনিয়ত নিবেদন করা তাহার জন্য একান্ত জরুরী। যে পর্যন্ত আমাদের অভাব থাকবে, প্রয়োজন ও চাহিদা অপূর্ণ থাকিবে এবং যে পর্যন্ত আমরা গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে না পারি, সে পর্যন্তই আমরা প্রার্থনার মুখাপেক্ষী।