পূর্ববর্তী আয়াতসমূহে বক্তব্যের পরেও, আল্লাহ্র একত্ব সম্বন্ধে যদি সন্দেহের সামান্যতম অবকাশও থাকিয়া যায়, তাহা নিরসনের জন্য এই আয়াতটি আসিয়াছে। যদি স্বীকৃতও হয় যে, আল্লাহ্ এক-অদ্বিতীয়, একচ্ছত্র ও সর্বতোভাবে স্বনির্ভর-স্বাধীন এবং যদি ইহাও স্বীকৃত হয় যে, তিনি জন্ম দেওয়া-নেওয়ার উর্দ্ধে, তথাপি প্রশ্ন উত্থাপিত হইতে পারে, তাহার মত ঐসব গুণ-সম্পন্ন অন্য কেহ তো থাকিতে পারে। আলোচ্য আয়াতটিতে এই সন্দেহ ও সম্ভাবনাকে দূরীভূত করা হইয়াছে এবং বলা হইয়াছে যে, আল্লাহ্র মত অন্য কেহই নাই। মানুষের বিবেকও এই কথায় সায় দেয় যে, সৃষ্টিকর্তা ও নিয়ন্তারূপে বিশ্ব-জগতের জন্য একজন প্রতিপালকই থাকা চাই। মহাবিশ্বের নিয়ম-শৃংখলা, যাহা ইহার প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে দেখিতে পাই, উহা তো এই কথাই সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করে যে, একটি সর্বব্যাপী নিয়মের অধীনে ইহা নিয়ন্ত্রিত হইতেছে। এই সর্বব্যাপী নিয়ম-শৃংখলা ও পরিকল্পনার একত্ব প্রমাণ করে ও ঘোষণা করে যে, ইহার সৃষ্টিকারীও একজনই (২১ঃ২৩)। এইভাবে, সূরাটি বহু ঈশ্বরবাদী বিশ্বাসের মূল উৎপাটিত করিয়াছে যাহা অন্যান্য ধর্মে কোন না কোনভাবে বা রূপে টিকিয়া রহিয়াছে। দুই, তিন বা ততোধিক আল্লাহ্তে বিশ্বাস কিংবা আল্লাহ্র সহিত সমান্তরালভাবে বস্তু ও আত্মার চির-অবস্থিতি ইত্যাদি বিশ্বাস যাহা অন্য ধর্মগুলিতে দেখিতে পাওয়া যায়, এই আয়াত উহার মূলে কুঠারাঘাত করিতেছে। এই সূরার আয়াতগুলিতে কুরআনে বর্ণিত আল্লাহ্র যে পবিত্র ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি-সংজ্ঞা দেওয়া হইয়াছে, বিশ্বের অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের ঈশ্বর সম্পকিত বর্ণনা এই সংজ্ঞার সৌন্দর্য, পবিত্রতা, সত্যতা ও মাহাত্ম্যের ধারে কাছেও পৌঁছিতে পারে নাই।