৩১১১

‘আরশ’ (সিংহাসন) বলিতে ঐসব অনতিক্রমনীয়, জ্ঞানাতীত গুণাবলীকে বুঝায়, যাহা আল্লাহ্‌তা’লার একান্ত নিজস্ব। এইগুলির প্রকাশ পায় আল্লাহ্‌তা’লার অন্যান্য অনুরূপ গুণাবলীর মাধ্যমে। তাই, সদৃশ বা অনুরূপ গুণাবলীকে এই আয়াতে ‘আরশ’ বহনকারী বলা হইয়াছে। এই ‘আরশ-বাহী’ গুণগুলি হইল ‘রাব্ব’, রাহমান, রাহীম ও মালিক-ইয়াওমিদ্দীন। এই মৌলিক ঐশী গুণাবলীর উপরে ভর করিয়াই বিশ্ব টিকিয়া আছে, মানুষের জীবন-জীবিকা ও উন্নতি এবং পরিণতি এই ঐশী গুণাবলীর সাথে সম্পৃক্ত। এই চারিটি ঐশী গুণের মহামহিমতা, ভয়ঙ্করতা ও সর্বব্যাপিতা, কেয়ামত-দিবসে দ্বিগুণিত হইয়া প্রকাশ পাইবে। ইহার আরেক অর্থ এই হইতে পারেঃ কেয়ামতের দিন, এই চারিটি সদৃশ গুণের সাথে সামঞ্জস্যশীল চারিটি ঐশী গুণ যাহা আল্লাহ্‌র একান্ত ও নিজস্ব এবং যাহার ক্রিয়াশীলতা পূর্বে কেহ দেখে নাই, সেইগুলিও ক্রিয়াশীল হইয়া দেখা দিবে। আর, যেহেতু ঐশী গুণাবলী ফিরিশ্‌তাগণের মাধ্যমে কার্যকরী করা হয়, সেই কারণেই, ঐ মহা-দিবসে আটজন ফিরিশ্‌তা আল্লাহ্‌তা’লার আরশ-বাহী হইবে বলিয়া এখানে বর্ণিত হইয়াছে। ইহা একটি ভুল ধারণা যে, যেহেতু ফিরিশ্‌তাগণ আরশ বহন করিবে বলিয়া এই আয়াতে বর্ণিত হইয়াছে, অতএব ‘আরশটি’ কোন সশরীরী বস্তু হইবে। কিন্তু কুরআনে ‘হামালা’ শব্দটি কেবল সশরীরী কোন বস্তুকে বহন করা অর্থেই ব্যবহৃত হয় নাই, বরং রূপকার্থেও ব্যবহৃত হইয়াছে। যথা ৩৩ঃ৭৩ আয়াতে মানুষকে আইন বহনকারী বা শরীয়তের বোঝা বহনকারী বলা হইয়াছে, অথচ শরীয়াত কোন সশরীরী বস্তু নহে। ঠিক সেই ভাবেই ফিরিশ্‌তা কর্তৃক আরশ-বহন দ্বারা বুঝায় যে, আল্লাহ্‌র গুণাবলীর বাস্তবতা ফিরিশ্‌তাদের মাধ্যমে কার্যকর ও প্রকাশিত হয়। আল্লাহ্‌র অনধিগম্য, একান্ত নিজস্ব গুণাবলী (আরশ-‘সিফাতে তানজিহিয়াহ’) কি তাহা আমরা হৃদয়ঙ্গম করিতে পারি না— উহাদের সাদৃশ্যমূলক গুণাবলী (সিফাতে তাশবিহিয়াহ) ব্যতিরেকে। কুরআনের ১১ঃ৮ আয়াতে ‘আরশ’ পানির উপর আছে বলিয়া বিবৃত হইয়াছে। ইহাতেও কেহ কেহ মনে করেন, যেহেতু পানি সৃষ্ট বস্তু, অতএব আরশও কোন সৃষ্ট বস্তুই হইবে। কিন্তু ইলহামী কিতাবের ভাষাতে ‘পানি’র অর্থ বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ‘আল্লাহ্‌র বাণী’ বা ওহী-ইলহামকে বুঝাইয়া থাকে। এই অর্থে ১১ঃ৮ আয়াতের তাৎপর্য দাঁড়ায়ঃ আল্লাহ্‌র আরশ আল্লাহ্‌র বাণীর উপর আছে। অর্থাৎ আল্লাহ্‌র বাণীর সাহায্য ব্যতিরেকে আল্লাহ্‌তা’লার দুর্ভেদ্য, অনতিক্রম্য গুণাবলী এবং তাঁহার মাহাত্ম্য ও মহিমা সম্যকভাবে বুঝা সম্ভব নয়। ‘আরশ’ বলিতে যে আল্লাহ্‌তা’লার একান্ত, অনধিগম্য, নিজস্ব গুণাবলী বুঝায় তাহা ২৩ঃ১১৭ আয়াত হইতেও পরিষ্কার বুঝা যায়। ৯৮৬ টীকা দেখুন।