চাঁদোয়া আকারে বানানো উপাসনালয় যাহা মূসা (আঃ) বনী ইসরাঈলের উপাসনার জন্য মরুপ্রান্তরে স্থাপন করিয়াছিলেন, কা’বা গৃহ, আকাশ। শেষোক্ত শব্দটিই এখানে সম্ভবতঃ অধিক প্রযোজ্য। কুরআনের ইহা একটি বৈশিষ্ট্য যে, যখন ইহা কোন সত্যকে দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করিতে চায়, তখন ইহা কোন জীব, বস্তু, প্রাকৃতিক নিয়ম বা দৃশ্যের কসম খায় অথবা ঐগুলিকে সাক্ষ্যরূপে পেশ করিয়া থাকে। এই সূরার প্রথম কয়েকটি আয়াতে মূসা (আঃ)-এর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ-যুক্ত কিছু বস্তুর শপথ আমরা দেখিতে পাই। এই মূসা (আঃ), মহানবী (সাঃ)-এর অনুরূপ পূর্বসূরী। ‘তুর পর্বতে’, মূসা (আঃ)-এর উপর আল্লাহ্র আইন-কানুন-সম্বলিত বাণী অবতীর্ণ হইয়াছিল এবং বনী ইসরাঈলের ভ্রাতৃবংশীয়দের মধ্য হইতে এক মহান নবীর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণীও ঐ তুর পর্বতেই মূসা (আঃ)-এর উপর অবতীর্ণ হইয়াছিল (দ্বিতীয় বিবরণ ১৮ঃ১৮, ৩৩ঃ২)। ভবিষ্যতে আগমনকারী যে মহাপুরুষের কথা উপরোক্ত ভবিষ্যদ্বাণীতে উল্লেখিত হইয়াছে, তিনিই হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সাঃ), ইহা একেবারে স্বতঃসিদ্ধ কথা। তাঁহারই আগমনকে কুরআনে মূসা (আঃ)-এর আগমনের অনুরূপ বলা হইয়াছে (৭৩ঃ১৬)। অতঃপর মূলপাঠে উল্লিখিত কিতাবকে (বাইবেল বা কুরআন, খুব সম্ভব কুরআন) সাক্ষ্য স্বরূপ পেশ করা হইয়াছে, যাহা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ‘মহানবী’ হওয়ার সত্যতাকে আজও সাক্ষ্যদান করিয়া উঁচু মাথায় স্থায়ীভাবে দাঁড়াইয়া আছে। এরপর সাক্ষ্য রাখা হইয়াছে, ‘সদা-আবাদ গৃহকে’ (মানে কা’বাগৃহকে)। এই সাক্ষ্য ‘সদা-আবাদ’ থাকার মধ্যে আমরা অন্যান্য কথা যাহাই পাই বা না পাই, এই সত্যটা স্পষ্টভাবেই পাইয়া থাকি যে, যে ধর্মের মূল ইবাদত খানা ‘কা’বা’ কেন্দ্ররূপে চির-জাগরূক থাকিবে, সেই ধর্ম নিশ্চয়ই চিরস্থায়ী হইবার জন্য আল্লাহ্র তরফ হইতে আসিয়াছে। এইস্থানে এই কা’বা ঘরের সংস্কার সাধনের জন্য বহু শতাব্দী পূর্বে আল্লাহ্র একজন পবিত্র বান্দা ইব্রাহীম (আঃ) তাঁহার পুত্র ইসমাঈল (আঃ)-এর সাহায্য নিয়া যখন নির্মাণ কাজে রত ছিলেন, তখন তিনি আল্লাহ্তা’লার সমীপে দোয়া করিয়াছিলেন, ‘হে আমার প্রভু! তুমি এই স্থানটিকে শান্তি ও নিরাপত্তার কেন্দ্রে পরিণত কর, যাহাতে ইহাকে কেন্দ্র করিয়া তোমার একত্ব ও অদ্বীতিয়ত্ব চতুর্দিকে ঘোষিত ও প্রচারিত হইতে থাকে’। ‘সুউচ্চ ছাদ’ বলিতে আকাশকে বুঝাইয়াছে। এই ৬ আয়াতে বলা হইয়াছে যে, মহানবী (সাঃ) ক্রমাগতভাবে ঐশী সাহায্য পাইতেছেন। অবিশ্বাসীরা এই সত্য স্বচক্ষে দেখিতে পাইতেছে যে, ইসলাম ক্রমে অগ্রসর হইতেছে ও উন্নতি করিতেছে এবং তাহাদের প্রতিটি শক্রুতাপূর্ণ পদক্ষেপ ও ষড়যন্ত্র ব্যর্থতায় পর্যবসিত হইতেছে। তাহারা এতই বোকা যে, ঐশী সাহায্যের এই সরল-সোজা সত্যটাও তাহাদের বোধগম্য হয় না।