বাঘভী, ইবনে হাজর ও অন্যান্য বিজ্ঞ পণ্ডিত ও তফসীরকারকগণের মতে ‘আন্নাস’ শব্দটি এখানে দজ্জালকে বুঝাইতেছে। হযরত নবী করীম (সাঃ)-এর একটি প্রসিদ্ধ হাদীস হইতেও ইহার সমর্থন পাওয়া যায়, যথা “আদম (আঃ)-এর সৃষ্টি হইতে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত দজ্জাল অপেক্ষা বড় (ভয়াবহ) কিছু সৃষ্টি করা হয় নাই (বুখারী)।” এই হাদীসে দজ্জালের অসামান্য চাতুর্য ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতার কথা প্রকাশ পায়। যেহেতু দজ্জালের অসামান্য প্রতারণা-শক্তি ও মোহিনী-ক্ষমতা থাকিবে, সেই জন্য বিশ্বাসীগণকে পূর্ব হইতেই সতর্ক করিয়া দেওয়া হইয়াছে যে, তাহারা যেন দজ্জালের প্রতারণা ও মোহিনী শক্তিতে মুগ্ধ হইয়া না পড়ে এবং দজ্জালের ধন-সম্পদ, বাহ্যিক ক্ষমতা ও অনন্য সাধারণ চাকচিক্যে যেন ভীতিগ্রস্ত না হয়। এই হাদীসের আলোকে প্রতীয়মান হয় যে, চূড়ান্ত অন্ধকারের সেই অশুভ শক্তিসমূহ যেগুলিকে সম্মিলিতভাবে ‘দজ্জাল’ নামে অভিহিত করা হইয়াছে, যতই চক্রান্ত-পূর্ণ, ক্ষমতাধর ও ভয়ঙ্কর হউক না কেন, ইসলামের উন্নতিকে ঠেকাইয়া রাখিতে পারিবে না বরং পরিণামে ইসলামের কাছে হার মানিতে বাধ্য হইবে। অত্র আয়াতটির অর্থ ইহাও হইতে পারে যে, মহাবিশ্ব সৃষ্টির তুলনায় আল্লাহ্তা’লার কাছে মানব-সৃষ্টি এক অকিঞ্চিৎকর ব্যাপার। অথচ মানুষ এত নগণ্য সৃষ্টি হওয়া সত্বেও নিজের অহমিকা ও ঔদ্ধত্যের কারণে সে আল্লাহ্তা’লার আহ্বানে সাড়া দিতে অস্বীকার করিয়া বসে।