‘নমল’ শব্দ যেহেতু নামবাচক বিশেষ্য সেহেতু ‘আন নাম্ল’ এর উপত্যকা অর্থ পিপীলিকার দেশ বুঝায় না, যেমনটি সাধারণভাবে ভ্রান্ত ধারণা করা হইয়া থাকে, বরং সেই উপত্যকায় ‘নমল’ নামীয় এক উপজাতি বাস করিত। ‘কামুস’ এর মধ্যে আমরা দেখিতে পাই, ‘আল আব্রিক্বাতু মিন মাইয়াহিল নামলাতি’ অর্থাৎ ‘আব্রিকা’ নামলাদের এক বংশধর। সুতরাং নমল একটি গোত্রের নাম, ঠিক যেমন এক আরববাসীর নাম ছিল ‘মাযিন’ (হামাসাহ) যাহার অর্থ পিপীলিকার ডিম। আরব দেশে সাধারণভাবে জীব-জন্তুর নামে উপজাতি বা গোত্রের নাম রাখা হইত যথা-বনু আসাদ, বনু কাল্ব, বনু নমল ইত্যাদি। এতদ্ব্যতীত আয়াতে ‘উদ্খুলু’ (প্রবেশ কর), এবং ‘মাসকিনাকুম’ (তোমাদের গৃহে) শব্দ দ্বয়ের ব্যবহার এই মতের জোর সমর্থন করে যে, নমল একটি গোত্র ছিল। কেননা পূর্ববর্তী ক্রিয়াপদ (কেবলমাত্র) সচেতন সত্তার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং পরবর্তী উক্তিও (তোমাদের বাসগৃহে) কুরআনে ব্যবহৃত হইয়াছে একমাত্র মানুষের বাসস্থানের জন্য (২৯ঃ৩৯ ও ৩২ঃ২৭)। অতএব নামলাহ্ অর্থ আন্ নাম্ল উপজাতির এক ব্যক্তি অর্থাৎ এক নমলবাসী। উল্লিখিত এই নম্লবাসী সম্ভবতঃ তাহাদের নেতা ছিল, যে সোলায়মান (আঃ)-এর সৈন্যবাহিনীর গতিপথ হইতে সরিয়া যাইবার জন্য এবং তাহাদের গৃহে প্রবেশ করিবার জন্য লোকদিগকে নির্দেশ দিয়া ছিল। কোন কোন নির্ভরযোগ্য পণ্ডিতের মতে এই উপত্যকা সীনাই-এর নিকটবর্তী গাজার বার মাইল উত্তরে সমুদ্র উপকুলবর্তী শহর আসকালান এবং জিবরীন-এর মধ্যবর্তী স্থলে অবস্থিত (তাকভীমুল বুলদান)। জিবরীন শহর দামেশকের ভিলাইয়াহ্ হইতে উত্তর দিকে অবস্থিত। ইহাতে প্রতীয়মান হয় যে, নমল উপত্যকা সমূদ্র উপকুলের নিকটবর্তী জেরুযালেমের অদূরে অথবা বিপরীতে দামেশক্ হইতে হেজাযের পথে একশত মাইল দূরে অবস্থিত ছিল। হযরত সেলায়মান (আঃ)-এর সময় পর্যন্ত দেশের এই অংশে আরব এবং মিদীয়ানীরা বাস করিত (দেখুন, সিরিয়া ও প্যালেষ্টাইনের প্রাচীন এবং আধুনিক মানচিত্র)। অন্যান্য বিশেষজ্ঞের মতে ইহা (নম্ল) ইয়েমেনে অবস্থিত। শেষের অভিমতটি অধিকতর বাস্তবসম্মত। এই ঐতিহাসিক ঘটনা হইতে বুঝা যায় যে, এই উপত্যকাকে কেন্দ্র করিয়া রচিত কাহিনীসমূহ অনুমান ছাড়া আর কিছুই নয়। আসল কথা হইতেছে, সাবার বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযানের সময় হযরত সোলায়ান (আঃ) যখন এই উপত্যকার মধ্য দিয়া অতিক্রম করিয়াছিলেন তখন সেখানে নমল উপজাতির লোকেরা বসবাস করিত।