এখানে ‘জিন্ন্’-এর মর্ম পর্বতশ্রেণী অথবা বন্য জাতি বুঝাইতে পারে। তফসীরাধীন আয়াত ২১ঃ৮৩, ৩৪ঃ১৩ এবং ৩৮ঃ৩৮ আয়াতগুলির সহিত মিলাইয়া পড়া উচিৎ। ইহা হযরত সোলায়মান (আঃ)-এর সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদিগের প্রতি ইশারা বলিয়া মনে হয়। ‘জিন্ন্’ (বন্য জাতি), ‘ইন্স’ (মানুষ) ও ‘তায়ের’ (পাখী) তিনটি শব্দ তাঁহার সামরিক বাহিনীর তিন শাখার প্রতিকী নাম হইতে পারে। বর্তমান আয়াতে এবং ৩৪ঃ১৩ আয়াতে জিন্ন্ শব্দ সেনাবাহিনীর বিশেষ শাখাকে বুঝাইবার জন্য ব্যবহার করা হইয়াছে, আবার, ২১ঃ৮৩ এবং ৩৮ঃ৩৮ আয়াতদ্বয়ে ‘শায়াতীন’ শব্দ একই শ্রেণীকে বুঝাইবার জন্য ব্যবহার করা হইয়াছে। ইহাতে প্রতীয়মান হয় যে, সোলায়মান (আঃ) কোন কোন বন্য জাতিকে দমন করিয়া বশে আনিয়াছিলেন। উভয় শব্দের এই আনুমানিক অর্থে ‘জিন্ন্’ এবং ‘শায়াতীন’ তাঁহার সেনাবহিনীর অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল এবং তাঁহার জন্য অন্যান্য কতিপয় কঠিন কার্য সম্পাদন করিত। ‘তায়ের’ শব্দের অপর অর্থ দ্রুতগামী অশ্ব। সেই অর্থে ‘তায়ের’ সোলায়মান (আঃ)-এর অশ্বারোহী সৈন্যবাহিনীকে বুঝাইতে পারে। শব্দের এই অর্থের পক্ষে দৃঢ় সমর্থন পাওয়া যায় ৩৮ঃ৩২-৩৪ আয়াতসমূহে যাহাতে অশ্বের প্রতি হযরত সোলায়মান (আঃ)-এর গভীর ভালবাসার কথা বর্ণিত হইয়াছে। অতএব যেখানে ‘জিন্ন্‘ এবং ‘ইনস্’ সোলায়মান (আঃ)-এর পদাতিক বাহিনীর দুই শাখাকে বুঝায়, সেখানে ‘তায়ের’ শব্দের অর্থ প্রকৃতই পাখী লওয়া হইলে এই শব্দ দ্বারা হযরত সোলায়মান (আঃ) যে সকল পাখীকে সংবাদ বহনের কাজে নিয়োজিত করিয়াছিলেন উহাদিগকে বুঝাইবে। অতএব উহারাও তাঁহার সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে পরিগণিত ছিল। কিন্তু এই তিনটি শব্দ রূপকে ব্যবহৃত হইলে এগুলির অর্থ হইতে পারে যথাক্রমে ‘বড়লোক’, ‘সাধারণ মানুষ’ এবং ‘অতি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন আধ্যাত্মিক মানুষ।’