২০৩২

এই আয়াতে অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হইয়াছে, যাহা পঞ্চম হিজরী সনে ঘটিয়াছিল। রসূল করীম (সাঃ)-এর বনী মুস্তালিকের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান হইতে প্রত্যাবর্তনের সময় মদীনার অনতিদূরে কোন এক স্থানে মুসলমান সৈন্য বাহিনীকে রাত্রি যাপন করিতে হইয়াছিল। এই অভিযানে আঁ-হযরত (সাঃ)-এর সঙ্গিণী ছিলেন মহান,পবিত্র চরিত্রের অধিকারিণী এবং বিশেষ কর্মক্ষমতা-সম্পন্ন তাঁহার স্ত্রী আয়েশা (রাঃ)। হযরত আয়েশা (রাঃ) প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে তাবু হইতে কিছু দূরে গিয়াছিলেন। ফিরিয়া আসার পর তিনি বুঝিতে পারিলেন যে, তাঁহার গলার হার খানা কোথাও পড়িয়া গিয়াছে। গলার হার এমন কোন বিশেষ প্রয়োজনীয় বস্তু ছিল না, কিন্তু যেহেতু উহা এক বান্ধবীর নিকট হইতে ধার করা ছিল, সেই কারণে আয়েশা (রাঃ) উহা খোঁজ করিতে আবার বাহিরে গিয়াছিলেন। প্রত্যাবর্তন করিয়া অত্যন্ত দুঃখ ও বিবশ মনে দেখিলেন যে, সৈন্য বাহিনী তাঁহার বাহনের উষ্ট্রীসহ অনেক দূরে অগ্রসর হইয়া গিয়াছে। পরিচর্যারত তাঁহার সঙ্গীরা ভাবিয়াছিল যে, হালকা-পাতলা ওজনের অল্প বয়স্কা আয়েশা (রাঃ) শয্যা-উপাদানের গদীর মধ্যেই আছেন। তিনি অসহায় অবস্থায় বসিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে এক সময় ঘুমাইয়া পড়িলেন। সাফওয়ান নামক মোহাজের যিনি পশ্চাৎভাগে আসিতেছিলেন, তাঁহাকে দেখিয়া চিনিতে পারিয়াছিলেন। কেননা পর্দা সম্বন্ধে আয়াত নাযেল হওয়ার পূর্বে তিনি আয়েশাকে দেখিয়াছিলেন। তিনি তাঁহাকে নিজের উষ্ট্রে চড়াইয়া নিজে উষ্ট্রের পিছনে পিছনে পায়ে হাটিয়া মদীনায় নিয়া আসিলেন (বুখারী, কিতাবুন্‌ নিকাহ)। এই ঘটনাকে সম্বল করিয়া আবদুল্লা বিন উবাই বিন সলূলের প্ররোচনায় মদীনার মোনাফেকরা হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে হিংসাত্মক অপবাদ রটনা করিয়াছিল এবং দুর্ভাগ্যবশতঃ মুসলমানগণের মধ্যেও কয়েকজন ইহাতে জড়িত ছিল। হযরত আয়েশা (রাঃ) নিষ্পাপ হওয়ার প্রমাণ আল্লাহ্‌তা’লার ওহীর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। যাহারা এই মিথ্যা অভিযোগ উদ্ভাবনে ও রটনায় অংশ গ্রহণ করিয়াছিল তাহাদিগকে শাস্তি প্রদান করা হইয়াছিল এবং কুৎসারটনাকারী ও তাহাদের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঐশী নির্দেশ নাযেল করা হইয়াছিল।