ব্যভিচারের পরেই অপর জঘন্য সামাজিক ব্যাধি যাহা মানব সমাজের জীবনীশক্তি ক্ষয় করিয়া ফেলে, উহা হইতেছে নির্দোষ ব্যক্তির সম্বন্ধে অপবাদ দেওয়া। ইসলাম এই সামাজিক ব্যাধিকে চরম অপসন্দনীয় গণ্য করে (যাহা তথা-কথিত আধুনিক সভ্য সমাজে প্রায় সার্বজনীন হইয়া গিয়াছে) এবং নির্দোষ ব্যক্তিদের সম্পর্কে অভিযোগকারীর কঠোর শাস্তি বিধান করে।আয়াতটি অপবাদ রটনাকারীর জন্য পর্যায়ক্রমে তিন প্রকার শাস্তির বিধান দিয়াছেঃ (ক) দৈহিক বেত্র-দণ্ড, (খ) মিথ্যা বর্ণনাকারী ও মিথ্যা হলফকারীরূপে অপমানিত করা, যাহা তাহাদের সাক্ষ্য দানকে বাতিল করিয়া দেয় এবং (গ) ঐশী বিধান লংঘনকারীরূপে বিচারপূর্বক আধ্যাত্মিক কলংক চিহ্ন স্থির করা। লক্ষ্যণীয় যে, অভিযোগ সত্য বা মিথ্যা ইহার কোন উল্লেখ এখানে করা হয় নাই। সুতরাং যে পর্যন্ত না অভিযোগকারী তাহার অভিযোগের সমর্থনে প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য পেশ করিতে পারে, সে পর্যন্ত সেই নালিশ মিথ্যা সাব্যস্ত হইবে এবং প্রতিফলে অভিযোগ উত্থাপনকারী নিজেই নিজেকে নির্ধারিত শাস্তি-যোগ্য বলিয়া দায়ী করিবে। প্রকৃত ঘটনা যাহাই হউক না কেন, অভিযোগে বর্ণিত অভিযুক্ত স্ত্রীলোক নিরপরাধী বলিয়া সাব্যস্ত হইবে যে পর্যন্ত না শরীয়াত অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থিত করা হয়। প্রকৃতপক্ষে অপবাদ ও কুৎসা রটনার অপরাধ শক্ত হাতে দমন করা শরীয়াতের লক্ষ্য। এই আয়াতে অন্তর্ভুক্ত হুকুম পুরুষ এবং নারী উভয়ের জন্য প্রযোজ্য, যদিও ব্যবহৃত শব্দ ‘মুহাসনাত’ যাহার অর্থ সতী নারী। আরবী ভাষায় যখন পুরুষ এবং স্ত্রী উভয় সম্বন্ধে কিছু বলা হয় তখন পুংলিঙ্গের ব্যবহার হয়। কিন্তু যখন কোন বস্তুর সম্পর্কে কিছু বলা হয় যাহা পুরুষ অপেক্ষা নারীর সঙ্গে অধিকতর সংশ্লিষ্ট, সেখানে স্ত্রীলিঙ্গের ব্যবহার করা হয়। এই খানে অপবাদ রটনার শাস্তির সহিত সম্বন্ধযুক্ত এই নির্দেশ, এই মিথ্যা কলংকের শিকার পুরুষ বা নারী যেই হউক না কেন, কিন্তু যেহেতু স্ত্রীলোকই সাধারণতঃ এই জাতীয় অপবাদের শিকারে পরিণত হইয়া থাকে সেই কারণে আয়াতটিতে সতী নারী বলা হইয়াছে। এইরূপে ‘আল্লাযীনা’ (তাহারা) শব্দ যদিও পুংলিঙ্গ, তবু পুরুষ এবং নারী উভয় অপবাদকারীকে বুঝায়।