এই আয়াত দ্বারা জিহাদ সম্পর্কিত বিষয়াদির উপস্থাপনা আরম্ভ হইয়াছে। কুরবানীর বিষয়বস্তু জিহাদের সহিত অতি গুরত্বপূর্ণ বিষয়ে ভূমিকা স্বরূপ উপযুক্ত অংশ গঠন করিয়াছে। মুসলমানদিগকে আত্ম-রক্ষার্থে যুদ্ধের অনুমতি দেওয়ার পূর্বাহ্নে কুরবানীর গুরুত্ব সম্বন্ধে অবহিত করা হইয়াছিল। এই আয়াত ইসলাম ধর্মে জেহাদের ধারণাকে সুস্পষ্টরূপে আলোকিত করিয়াছে। আয়াত প্রতিপন্ন করে যে, জিহাদ হইতেছে সত্যের জন্য যুদ্ধ করা। কিন্তু কার্যতঃ ইসলাম ধর্ম আক্রমণাত্মক যুদ্ধের অনুমতি দেয় না, পক্ষান্তরে কাহারো সম্মান, দেশ বা বিশ্বাস রক্ষার্থে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়াকে ইসলাম সবোচ্চ নৈতিক কর্তব্য বলিয়া বিবেচনা করে। মানুষ আল্লাহ্তা’লার মহোত্তম সৃষ্টি। সে আল্লাহ্র সৃষ্টির মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট, সৃষ্টির উদ্দেশ্য এবং শেষ পরিণতি। মর্তলোকে মানুষ আল্লাহ্তা’লার খলীফা বা প্রতিনিধি এবং তাঁহার সমগ্র সৃষ্টির সেরা (২ঃ৩১)। ইহাই হইতেছে ইসলাম ধর্মে বিশ্বমানবের উচ্চ মর্যাদাপূর্ণ স্থান। অতএব ইহা খুবই স্বাভাবিক, যে ধর্ম মানুষকে এইরূপে উচ্চ মর্যাদার আসনে উন্নীত করিয়াছে, উহা সঙ্গতরূপেই মানব জীবনের প্রতি মহান গুরুত্ব এবং পবিত্রতা সংযুক্ত করিয়াছে। কুরআন করীমের মতে, সমস্ত কিছুর মধ্যে মানবের জীবন সর্বাপেক্ষা পবিত্র এবং অলংঘনীয়। কুরআন করীমে নির্দিষ্টভাবে বর্ণিত পরিস্থিতির অধীন ব্যতীত ইহা (জীবন) হরণ করা বা পবিত্রকে অপবিত্র করা নিষিদ্ধ (৫ঃ৩৩, ১৭ঃ৩৪)।ইহা মানুষের অমূল্য সম্পদ—সম্ভবতঃ ইহা স্বয়ং জীবন হইতেও অধিকতর মূল্যবান। মানব জীবনের সঙ্গে, কুরআন যে সবোচ্চ পবিত্রতা সংযোজন করিয়াছে, তাহা মানুষের অমূল্য অধিকার, নৈতিক-চেতনা বা নীতিবোধের স্বীকৃতি প্রদান এবং ইহার পবিত্রতা এবং অলংঘনীয়তা ঘোষণা করিতে ব্যর্থ হইতে পারে না। এই অমূল্য অধিকার সংরক্ষণ করিবার জন্যই মুসলমানদিগকে অস্ত্রধারণের অনুমতি দেওয়া হইয়াছিল।