১৭৮০

‘সে রসূল, নবী ছিল’ এই শব্দগুলি প্রচলিত এই ভুল ধারণার অপনোদন করিয়া দিয়াছে যে, রসূল—যিনি নূতন শরীয়াত বা কিতাব নিয়া আসেন এবং একজন নবী—যিনি কেবল মানবের সংস্কার সাধনের জন্য আল্লাহ্‌তা’লার প্রত্যাদিষ্ট হইয়া থাকেন এবং যদিও একজন রসূলের মতই এক নবী ওহী-ইলহাম পাইয়া থাকেন, তথাপি তিনি নূতন বিধান বা আদেশ সম্বলিত কোন নূতন কিতাব নিয়া আসেন না। সাধারণভাবে প্রচলিত এই ধারণানুযায়ী প্রত্যেক রসূলই নবী হইয়া থাকেন কিন্তু প্রত্যেক নবী রসূল নহেন। তফসীরাধীন আয়াত এই ভ্রান্ত ধারণাকে নস্যাৎ করিয়া দিয়াছে। কারণ যদি একজন রসূল নতুন শরিয়াত বহন করার কারণে তিনি অবশ্যই নবী, তাহা হইলে এখানে ও অন্যান্য আয়াতে রসূল শব্দের সঙ্গে নবী শব্দের সংযুক্তি অনাবশ্যক এবং অযৌক্তিক। প্রকৃত ব্যাপার হইল এই যে, প্রত্যেক রসূলই নবী এবং প্রত্যেক নবীই রসূল। এই দুইটি পদ অভিন্ন এবং একই পদের দুইটি অবস্থা বুঝায় এবং একই ব্যক্তির দুইটি কর্তব্য বুঝায়। একজন ঐশী সংস্কারক যখন আল্লাহ্‌তা’লার নিকট হইতে সংবাদ পাইয়া থাকেন তখন তিনি রসূল (রিসালাত অর্থ সংবাদ), এবং তিনিই নবী এই অর্থে যে, প্রাপ্ত সংবাদসমূহ তিনি তাঁহার জাতির লোকের নিকট প্রচার করেন যাহাদের প্রতি তিনি প্রেরিত হইয়া থাকেন (নবুওয়াত অর্থ গুরুত্বপূর্ণ সংবাদবহন করণ)। সুতরাং প্রত্যেক রসূলই নবী—কারণ আল্লাহ্‌তা’লার নিকট হইতে ওহী পাইয়া তিনি উহা তাহার জাতি বা জনগণের নিকট প্রচার করেন এবং প্রত্যেক নবীই রসূল হইয়া থাকেন, কেননা তিনি তাঁহার জাতির নিকট পৌঁছাইয়া দেন সেই সব ওহী বা সংবাদ যাহা তিনি আল্লাহ্‌তা’লার নিকট হইতে পাইয়া থাকেন। নবীর কর্ম রসূলের ক্রিয়াকলাপের অনুসরণ মাত্র। রসূলের আসনে বা মর্যাদায় প্রথমে তিনি ঐশী-বাণী লাভ করিয়া থাকেন এবং নবীরূপে তিনি প্রাপ্য বাণীসমূহ তাহার জনগণের নিকট প্রচার করেন। অতএব এই আয়াত এবং কুরআন করীমের যেসব স্থানে রসূল এবং নবী শব্দদ্বয় একত্রে আসিয়াছে সে স্থানেই অর্থাৎ প্রত্যেকবারই ‘নবী’ শব্দ ‘রাসূল’ শব্দের অনুগামী হইয়াছে, যেহেতু ইহাই স্বাভাবিক নিয়মসিদ্ধ।