উম্মে হানি (রাঃ) হইতে রেওয়ায়াত আছে যে, হযরত রসূল করীম (সাঃ) এরশাদ করিয়াছিলেন যে, সংযুক্ত বর্ণ ‘কাফ হা ইয়া আইন সাদ’ সমূহে ‘কাফ’ দ্বারা কাফি (পর্যাপ্ত, যথেষ্ট), ‘হা’ দ্বারা হাদী (সত্য-নিদর্শক), ‘আইন’ দ্বারা আলীম (সর্বজ্ঞাতা) এবং ‘সাদ’ দ্বারা সাদেক (সত্যনিষ্ঠ) এইরূপে সংযুক্ত সাংকেতিক অক্ষরগুলির পঠন এইরূপ হয়ঃ যথা ‘আনতা কাফী আনতা হাদী ইয়া আলীম ইয়া সাদিক’ অর্থাৎ তুমিই যথেষ্ট— সকলের প্রয়োজন সাধনে সক্ষম, তুমি সত্য পথ-প্রদর্শক, হে সর্বজ্ঞাতা ও সত্যনিষ্ঠ। আল্লাহ্তা’লার চারটি সিফ্ত, যাহা এই সংযুক্ত বর্ণমালায় পরিস্ফুটিত হইয়াছে, খৃষ্টানদিগের প্রায়শ্চিত্তবাদের অসারতা উন্মোচন ও প্রত্যাখ্যান করিয়াছে এবং ফলে এই মতবাদ মিথ্যা প্রমাণিত হইয়া যায়। যীশুর ঈশ্বরত্ব তথা ত্রিত্ববাদী ধর্মমতের সম্পূর্ণ অস্তিত্বই চূর্ণ বিচূর্ণ হইয়া যায়। উক্ত চারটি গুণাবলীর মধ্যে আলীম এবং সাদেক এই দুইটি প্রধান এবং মৌলিক গুণ এবং কাফী ও হাদী উহাদের অধীন ও প্রথমোক্ত সিফাতদ্বয় হইতে নির্গত এবং উহাদেরই অবশ্যম্ভাবী বিকাশ এবং প্রতিফলন। যদি আল্লাহ্তা’লা আলীম (সর্বজ্ঞানী) হন, তাহা হইলে প্রায়শ্চিত্তবাদী মতের কোন স্থান থাকে না।কারণ এই মতবাদ পূর্বাহ্নেই মনিয়া নেয় যে, আল্লাহ্তা’লা বিশ্ব সম্পর্কিত বিষয়াদি পরিচালনার জন্য এক বিশেষ কর্মসূচীর পূর্ব-পরিকল্পনা গ্রহণ করিয়াছিলেন, কিন্তু তাঁহার জ্ঞান ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় তাঁহার পরিকল্পনা ব্যর্থ হইয়াছিল এবং সেই কারণে আল্লাহ্তা’লা পৃথিবীর রক্ষাকল্পে তাঁহার নিজ পুত্রকে কুরবানী করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। আল্লাহ্তা’লার পরিকল্পনার ব্যর্থতা তাহার সর্বজ্ঞানী হওয়া গুণের বিসদৃশ বা বিরুদ্ধ এবং যখন আল্লাহ্র জ্ঞানকে ক্রুটিপূর্ণ দেখানো হয়, তখন তিনি কাফী অর্থাৎ যথেষ্ট বা পরিপূর্ণ বলিয়া দাবী করিতে পারেন না। কারণ যে সত্তা সর্বজ্ঞ (আলীম) নিশ্চিত ও অনিবার্যভাবেই তিনি পর্যাপ্ত, পরিপূর্ণ এবং যথেষ্ট। একইরূপে সাদিক গুণ এবং ইহার অধীনস্থ হাদী (পরিচালক বা হেদায়াতকারী) প্রায়শ্চিত্তবাদ ধর্ম-মতকে চূর্ণ করিয়া ফেলে। যদি আল্লাহ্তা’লা প্রকৃতই হাদী বা পরিচালক না হন এবং পাপীদের জন্য যীশুর প্রায়শ্চিত্তে বিশ্বাস না করিলে নাজাত ও মুক্তি যদি সম্ভব না হয়, তাহা হইলে স্বীকার করিয়া লইতে হইবে যে, আল্লাহ্তা’লার সকল নবী-রসূলগণই মিথ্যাবাদী এবং প্রতারক (নাউযুবিল্লাহ্), কারণ তাহারা খৃষ্টীয় বিশ্বাসের বিপরীত শিক্ষা দিতেন এবং প্রচার করিতেন যে, মুক্তি এবং নাজাত কেবল সত্য ঈমান এবং সৎকর্মের মাধ্যমেই সম্ভব এবং আল্লাহ্তা’লার প্রত্যাদিষ্ট নবী-রসূলগণের সত্যবাদিতাই প্রতিবিম্বিত হয় বা স্বাক্ষর বহন করে এবং তাঁহার হাদী অর্থাৎ সত্য-পরিচালক হওয়া প্রমাণ করে। এইরূপে উক্ত বর্ণমালাগুলির সংক্ষিপ্ত সংযুক্তি এই ইংগিতই করে যে, খৃষ্টানদিগের ধর্মবিশ্বাস ও মতবাদের সঠিক পর্যালোচনায় ইহাই সাব্যস্ত হয় যে, এই সমস্ত অসমর্থিত মতবাদ যুক্তির ধোপে টিকে না এবং ইহা তাহাদিগকে উত্তমরূপে উপলদ্ধি করাইবার শ্রেষ্ঠ পন্থা হইতেছে আল্লাহ্তা’লার সিফ্তসমূহের উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা, চিন্তা করা এবং লেখা— বিশেষভাবে উপরোক্ত চারটি গুণ সম্বন্ধে। মুকাত্তায়াতের উপর বিস্তারিত আলোচনার জন্য ১৬ টীকা দেখুন।