কুরআন মজীদের রচনা-শৈলী এমনি বিস্ময়কর যে, কোন কোন সন্দেহহীন বিষয়ে ভাব প্রকাশার্থে এমন বিশেষ শব্দ বাছিয়া লওয়া হইয়াছে যাহা ঘটনাবলীর সুদীর্ঘ ধারাবাহিকতাকে চিহ্নিত করিয়া দেখাইয়া দেয়। এই নির্দিষ্ট দৃষ্টান্তে—‘মিথ্যা বিলুপ্ত হইয়াছে’ ভাবটি অন্য শব্দ দ্বারাও প্রকাশ পাইতে পারিত, যথাঃ ‘হালাকা’ (ধ্বংস), ‘বাতেলা’ (অনাবশ্যক বা অকর্মণ্য হইয়া পড়িল)। কিন্তু এই দুইটি শব্দের কোনটিই ক্রমশঃ দুর্বল হইতে হইতে বিলোপ হইয়া যাওয়া ভাব প্রকাশ করিত না, যেই ভাব ‘যাহাকা’ শব্দ দ্বারা প্রকাশ পাইতেছে। তফসীরাধীন আয়াত এই ইঙ্গিত বহন করে যে, নবী করীম (সাঃ) মদীনায় প্রবেশ করার পর তাঁহার শক্তি ক্রমেই বৃদ্ধি পাইতে থাকিবে এবং তাঁহার শত্রুদের ক্ষমতার পতন হইতে হইতে চূর্ণ বিচূর্ণ হইয়া বিলুপ্ত হইয়া যাইবে। তদোপরি কুরআনের রচনা ভঙ্গী এমন চমৎকার যে, ছন্দ-বদ্ধ কবিতা না হইয়াও ইহার আয়াতসমূহ কাব্যিক ছন্দে সুর ও ব্যঞ্জনা বহন করে, যাহা না হইলে চরম আনন্দানুভূতি পূর্ণভাবে প্রকাশ করা অসম্ভব। মক্কা বিজয়ের পর মহানবী (সাঃ) যখন কা’বা শরীফ হইতে মূর্তিগুলিকে সরাইতে ছিলেন, যেগুলি দ্বারা বায়তুল্লাহকে অপবিত্র করা হইয়াছিল, তখন তিনি মূর্তিগুলিকে ভাঙ্গার সাথে সাথে এই আয়াতে করীমা পুনঃ পুনঃ পাঠ করিতেছিলেন।