এই আয়াতে তিনটি আদেশাক্তা এবং তিনটি নিষেধাজ্ঞা রহিয়াছে। ইহাতে মানুষের নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির বিভিন্ন পর্যায়ে ইতিবাচক ও নেতিবাচক ভূমিকার পর্যালোচনা করা হইয়াছে। ইহা মানুষকে ন্যায় বিচার, অপরের প্রতি ভাল ব্যবহার এবং সকলের প্রতি আত্মীয়সুলভ সদয় ব্যবহার করার জন্য আদেশ দেয় এবং অশ্লীল আচরণ, প্রকাশ্য পাপাচার এবং সীমালঙ্ঘন হইতে নিষেধ করে। ন্যায় বিচারের মর্ম হইল যে, একজন মানুষ অপরের সহিত সেইরূপ আচরণ করিবে যেইরূপ সে অপরের নিকট হইতে পাইতে চায়। সে অপরের নিকট হইতে যে পরিমাণে উপকার অথবা অপকার লাভ করিবে প্রতিদানে সমতুল্য হিত বা অহিত সাধন করিবে। আদল (ন্যায়-বিচার)-এর উপরের দজা (স্তর) হইল এহসান (পরোপকার)। একে অন্যের হিত সাধনের বেলায় প্রতিদানের প্রত্যাশা করিবে না, এমনকি দুর্ব্যবহারের মেকাবেলায়ও নহে। তাহার আচরণ কোন প্রকার প্রতিদান বা বিনিময়ের চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হইবে না। নৈতিক উন্নতির সর্বোচ্চ এবং সর্বশেষ স্তর হইল “ঈতাইযিল কুরবা” (জ্ঞাতি সুলভ দান)।এই পর্যায়ে একজন মো’মেনের নিকট হইতে ইহাই প্রত্যাশা করা যায় যে, সে স্বাভাবিক মনের আবেগে অনুপ্রাণিত হইয়া পরোপকার করিবে যেমন অতি নিকট সম্পর্কের আত্মীয়ের প্রতি করা হয়। সে অন্যের নিকট হইতে প্রাপ্ত উপকারের বিনিময়ে পরোপকার করে না এবং প্রতিদানে তুলনামূলকভাবে বেশী উপকারের ধারণাতেও ইহা করে না। বরং তাহার অবস্থা হইতেছে একজন সন্তানের প্রতি তাহার মায়ের অনুপ্রেরণাপূর্ণ ভালবাসা সদৃশ। একজন মো’মেন এই স্তরে পৌঁছলে তাহার নৈতিক উন্নতি পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়। নৈতিকতার এই তিনটি স্তর মানবের নৈতিক উন্নতির চূড়ান্ত ও নিশ্চিত অবস্থা গঠন করে। ইহার নেতিবাচক দিক স্পষ্ট রূপে চিত্রিত হইয়াছে তিনটি শব্দে যথাঃ ‘ফাহ্শা’ (অশ্লীলতা), ‘মুনকার’ ( মন্দকাজ ), ‘বাগাওত’ (সীমালঙ্ঘন)। ফাহ্শা দ্বারা সেই কাজ বুঝায় যাহা শুধু পাপাচারী নিজেই জানে এবং মুনকার সেই সকল অশ্লীলতা বা মন্দকে বুঝায় যাহা অন্য লোকেরাও দেখে এবং নিন্দা করে, যদিও উহা দ্বারা তাহারা কোন ক্ষতির শিকার হয় না অথবা তাহাদের অধিকারে কোন হস্তক্ষেপও হয় না। বাগাওয়াত ঐ সকল মন্দ, পাপ এবং অশিষ্টতাকে বুঝায় যাহা অন্যেরা দেখে ও অনুভব করে এবং কেবল ধিক্কারই দেয় না বরং সেইগুলি তাহাদের সুস্পষ্ট ক্ষতি সাধনও করিয়া থাকে। প্রকাশ্য ও ক্ষতিকর সকল প্রকার পাপই এই শব্দটির আওতায় পড়ে।