১৭ আয়াতে আকাশের কক্ষপথসমূহ দ্বারা সাধারণভাবে আল্লাহ্তা’লার রসূলগণকে বুঝানো হইয়াছে, আর আলোচ্য আয়াতে ‘শিহাবুম্ মুবীন’ অর্থঃ উজ্জ্বল অগ্নিশিখা অথবা ৩৭ঃ১১ আয়াতে জ্বলন্ত উল্কা দ্বারা যুগের নবী বা নবী শ্রেষ্ঠ হযরত মুহম্মদ (সাঃ)-কে নির্দেশ করিতেছে। উজ্জ্বল অগ্নিশিখা কর্তৃক শয়তানের পশ্চাদ্ধাবন দ্বারা ইহাই ব্যক্ত করে যে, যতকাল ধর্মীয় শিক্ষা আল্লাহ্তা’লার পবিত্র ইলহাম-ভিত্তিক চলিতে থাকে (আয যিকর—১০ আয়াত) এবং আলো দান করিতে থাকে এবং পথ প্রদর্শন করিতে থাকে ততকাল পর্যন্ত পবিত্র সংস্কারকগণও সংস্কারের জন্য আবির্ভূত হইতে থাকেন। পৃথিবীতে সংস্কারকের আবির্ভাবের লক্ষণাবলীর মধ্যে একটি হইলঃ পুনঃ পুনঃ উল্কাপাতের মত উজ্জ্বল ও ক্ষণস্থায়ী ব্যাপার সংঘটন হইতে থাকা যাহাকে অতিমাত্রায় নক্ষত্রের পতন বলা হইয়া থাকে। মহানবী (সাঃ)-এর যুগে এত অধিক সংখ্যায় উল্কাপিণ্ডের পতন ঘটিয়াছিল যে, কাফেরগণ চিন্তিত হইয়া পড়িয়াছিল যে, এই বুঝি আকাশ ও মাটি খণ্ড-বিখণ্ড হইয়া যায় (কাসীর)। ইত্যাকার অসাধারণ ঘটনাবলী সংঘটিত হওয়ার ফলে জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কে অভিজ্ঞ হিরাক্লিয়াস অনুমান করিয়াছিল যে, আরবদের বাদশাহ-নবী অবশ্যই আবির্ভূত হইয়া থাকিবেন (বুখারী,কিতাব বদ উলওহী)। ঈসা (আঃ)-এর যুগেও অস্বাভাবিক রকম বহু সংখ্যক উল্কা পতন হইয়াছিল (বিহার)। আমাদের যুগেও অর্থাৎ ১৮৮৫ খৃষ্টাব্দে আকাশে এইরূপ নক্ষত্র পতনের খেলা দেখা গিয়াছিল। এইরূপে ইতিহাস এবং হাদীস উভয়ই এই বাস্তব ঘটনার দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে যে, বহু সংখ্যায় অস্বাভাবিক রকমে উল্কা-পতন পবিত্র সংস্কারক আবির্ভূত হওয়ার প্রকাশ্য নিদর্শন (দেখুন দি লারজার এডিশন অব দি কমেন্টারী, পৃঃ ১২৭২—১২৭৬)। ১৮ আয়াতে উল্লেখিত শয়তানের অর্থ ভাগ্যগণনাকারী বা ভবিষ্যদ্বক্তা এবং অনুমানকারী গণক হইতে পারে। ইহা হইলে ‘শয়তানকে প্রস্তরাঘাত করার জন্য’(৬৭ঃ৬) কথাটি এই মর্ম প্রকাশ করে যে, যখন পৃথিবীতে কোন ঐশী সংস্কারক থাকে না, তখন জ্যোতিষী ও ভাগ্যগণনাকারী ভবিষ্যদ্বক্তাগণ সাময়িকভাবে সরল-মনা সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করার অধার্মিক বা পাপিষ্ঠ ব্যবসায় সফলকাম হয়, কিন্তু আল্লাহ্তা’লার পবিত্র সংস্কারকের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে তাহাদের মিথ্যা গুমর ফাঁক হইয়া পড়ে এবং জনসাধারণ তখন সহজেই নবীগণের সত্য ভবিষ্যদ্বাণী এবং জ্যোতিষী ভবিষ্যদ্বক্তাদের গণনা ও অনুমানের পার্থক্য বুঝিতে পারে। এই আয়াতের অর্থ ইহাও হইতে পারে যে, যখন কতক দুষ্টলোক ইলহামী পবিত্র বাণীর মৌলিক রচনার কিয়দংশ ছিড়িয়া নিয়া উহার বিকৃত অর্থ প্রচার করিতে লিপ্ত হয়, তখন এক নূতন উজ্জ্বল নিদর্শন আকস্মিকভাবে দীপ্তিমান হইয়া প্রকাশ পায় এবং শয়তান-প্রকৃতির দুষ্টলোকদের সকল দুরভিসন্ধিপূর্ণ কৌশল এবং শয়তানী কার্যকলাপ সমূলে ধ্বংস করিয়া দেয়।