এইরূপ বলিলে ভুল হইবে যে, ইউসুফ (আঃ) নিজেই তাঁহার ভাইদের থলিতে পেয়ালাটি রাখার নির্দেশ দিয়া পরে তাহাকে চুরির দায়ে অভিযুক্ত করিয়াছিলেন। এইরূপ কর্ম ইউসুফ (আঃ)-এর মর্যাদার পরিপন্থী কাজ। প্রকৃত পক্ষে উহা একটি পানপাত্র ছিল (সিকাইয়াহ) যাহা ইউসুফ (আঃ) তাঁহার ভাইয়ের থলিতে রাখিবার নির্দেশ দিয়াছিলেন। অথচ রাজকীয় ঘোষণাকারীর প্রচারানুযায়ী যাহা হারাইয়াছিল উহা ছিল ‘সুওয়াআ’ অর্থাৎ পরিমাপ করার পাত্র, পান-পাত্র নহে। মনে হয় বহু বছরের বিচ্ছেদ অবসানের পর স্বল্পকালের সাক্ষাত শেষে ভাইদের ফিরতি সফরের প্রস্তুতি পর্বে সাহায্য করার উত্তেজনায় এবং ভাই বেনজামিনের আশু বিদায় ও বিয়োগ-ব্যথায় হযরত ইউসুফ (আঃ) পিপাসার্ত হইয়া পানি চাহিয়াছিলেন। রাজকীয় পরিমাপ-পাত্রে তাহার জন্য পানি আনা হইয়াছিল। এই জাতীয় পাত্র সেই যুগে পরিমাপের জন্য এবং পানীয় পানের উভয় কাজেই ব্যবহৃত হইত। পিপাসা নিবারণ করার পর ইউসুফ (আঃ) অন্যমনস্কভাবে পাত্রটি বেনজামিনের মালপত্রের মধ্যেই রাখিয়াছিলেন, এবং সকলের অলক্ষ্যে ও অজান্তে তাঁহার ভাইয়ের মাল-পত্রের সঙ্গে বাধিয়া ফেলা হইয়াছিল। হযরত ইউসুফ (আঃ) তৎক্ষণাৎ বুঝিতে পারিয়া ছিলেন যে, কি প্রকারে এই ত্রুটি ঘটিয়াছিল, কিন্তু চিন্তা করিলেন যে, আদ্যোপান্ত সকল ঘটনা আল্লাহ্তা’লার ইচ্ছা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটিয়াছে—হয়ত বেনজামিনের পিছনে থাকিয়া যাওয়ার জন্যই। ইহা ভাবিয়া তিনি পরিণামদর্শী বিজ্ঞের মতই মরু-যাত্রীদের দল বিদায় না হওয়া পর্যন্ত নীরব রহিলেন।