“আরাবী” এর উৎপত্তি আরিবা বা আরুবা হইতে। ‘আরিবাতুল-বিরু’-এর অর্থ এই কূপে অনেক পানি ছিল। আরুবার রাজুলু এর অর্থ লোকটি তাহার বক্তব্যের মাঝে রুঢ় হইয়া খুব সহজ ও স্পষ্টভাবে কথা বলিয়াছিল, সে সতেজ বা জীবন্ত হইয়া উঠিল। অতএব, “কুরআনান আরারীয়ান” এর অর্থ হইবেঃ (১) যে গ্রন্থ অত্যন্ত নিয়মিত এবং ব্যাপকভাবে পঠিত হয় এবং (২) যাহা উহার বিশদ অর্থ অধিক বুদ্ধিশক্তিসম্পন্ন, প্রাঞ্জল এবং সুস্পষ্ট ভাষায় প্রকাশ করিতে পারে (লেইন)। আরবী শব্দ সম্পূর্ণতা, প্রাচুর্য ও স্পষ্টতা এই সকল ভাব প্রকাশ করে। আরবী ভাষার এই নামকরণ করার কারণ এই যে, ইহার পূর্ণ অর্থবহ অসংখ্য মূল শব্দ রহিয়াছে এবং ইহা অত্যন্ত সুস্পষ্টরূপে প্রকাশ ক্ষমতাসম্পন্ন, প্রান্জল ও ব্যাপক তাৎপর্যপূর্ণ। আরবী ভাষাতে যথোপযুক্ত শব্দ এবং শব্দ-গুচ্ছ রহিয়াছে যদ্বারা সব ধরণের ভাব, কল্পনা ও সর্বপ্রকার অর্থ প্রকাশ করা যায়। যে কোন বিষয়বস্তু যথার্থতা এবং সম্পূর্ণতার সাথে এই ভাষাতে আলোচনা করা যায় যাহা অন্য কোন ভাষার তুলনায় অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। ইউরোপীয় পণ্ডিতগণ স্বীকার করিতে বাধ্য হইয়াছেন যে, আরবী মূল শব্দ বা ভিত্তির দিকদিয়া পরিপূর্ণ ভাষা। ইহা শত সহস্র মূল শব্দ নিয়া গঠিত যাহা বিশাল বৈচিত্রময় অর্থে পরিপূর্ণ। বিখ্যাত ভাষাবিদ ইবনে জিন্নি অন্য আরেকজন প্রামাণ্য খ্যাতনামা ভাষাবিদ আবু আলীর বরাত দিয়া দাবী করিয়াছেন যে, আরবী ভাষা উহার প্রতিটি অক্ষর পর্যন্ত স্পষ্ট এবং নির্দিষ্ট অর্থ বহন করে। উদাহরণ স্বরূপ তিনি উল্লেখ করিয়াছেন যে, মিম, লাম্ এবং কাফ অক্ষর একত্রে শক্তির ধারণা প্রকাশ করে—এই অর্থ কম বেশী সকল শব্দে প্রচলিত যাহা এই অক্ষরগুলির সাহায্যে গঠিত অথবা এই মূল হইতে উৎপন্ন। পূর্ববর্তী আয়াতে কুরআনকে এই কিতাব বলা হইয়াছে, যাহা একটি ভবিষ্যদ্বাণী বহন করিতেছে যে, ইহা সর্বকালে গ্রন্থাকারে সংরক্ষিত হইতে থাকিবে। বর্তমান আয়াত এই কিতাব’ কে ‘এই কুরআন’ বলিয়া আখ্যায়িত করিয়া ভবিষ্যদ্বাণী করিতেছে যে, ইহা অত্যন্ত ব্যাপকভাবে পঠিত হইবে এবং খুব সুচিন্তিত রূপে ইহার চর্চা করা হইবে। এই বাস্তব ঘটনাটি ইসলামের বিরুদ্ধ বাদীগণের কেহই অস্বীকার করিতে পারে না যে,অন্য কোন গ্রন্থ কুরআনের তুল্য ব্যাপক এবং পুনঃ পুনঃ পাঠ করা হয় না। অধ্যাপক নলডিকি বলেন, ‘যেহেতু কুরআনের ব্যবহারকারীগণ উপাসনালয়ে, বিদ্যালয়ে এবং অন্যান্য ভাবে খৃষ্টান দেশসমূহে বাইবেল পাঠের তুলনায় অধিকতর, সেহেতু ইহা প্রকৃতই বলা হইয়াছে যে, পৃথিবীতে সর্বাপেক্ষা অধিক ব্যাপকভাবে পঠিত গ্রন্থ হইল কুরআন’ (এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটেনিকা, নবম সংস্করণ)।