১৩২১

এই আয়াত হইতে জানা যায় যে, নূহ (আঃ)-এর বংশধরগণ ছাড়াও বিশ্বাসীদের সন্তানসহ যাহারা নূহ (আঃ)-এর সঙ্গে নৌকায় আরোহণ করিয়াছিল তাহারা মহাপ্লাবন হইতে রক্ষা পাইয়াছিল। তাহারা অনেক উন্নতি করিয়াছিল ও সংখ্যায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইয়াছিল এবং দেশ-বিদেশে ছড়াইয়া পড়িয়াছিল। এই কারণে পণ্ডিত ব্যক্তিরাও এই ধারণা ব্যক্ত করিয়া থাকেন যে, ভূপৃষ্ঠে বসবাসকারী জনগোষ্ঠির অধিকাংশই নূহ (আঃ)-এর বংশোদ্ভূত। এই আকসি্ক মহাপ্লাবনের ঘটনার গল্প-গাথা কিছু কিছু পরিবর্তিত হইলেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সাহিত্য ও লোক-গাথায় বিদ্যমান রহিয়াছে (এনসাইকোঃ রিল এণ্ড এথ.এনসাইকো বিব, এনসাইকো ব্রিট ডিলিউগ ’Deluge’ অধ্যায়)। এই দৈব দুর্ঘটনা মানব সভ্যতার উষা লগ্নে সংঘটিত হইয়াছিল বলিয়া অনুমিত হয়। ইহা সুবিদিত ও ঐতিহাসিক সত্য যে, যখনই কৃষ্টি ও সভ্যতায় উন্নততর কোন জাতি কোন দেশে বা ভূখণ্ডে বসতি স্থাপন করিতে গিয়াছিল, তখনই সেই দেশের অনুন্নত অধিবাসীদিগের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করিয়াছে অথবা সম্পূর্ণ পরাভূত করিয়া রাখিয়াছে। এইরূপেই বোধ হয় নূহ (আঃ) এবং তাঁহার সাথীগণের বংশোদ্ভূত জাতির লোকেরা মানব সভ্যতার প্রতিষ্ঠাতারূপে বিভিন্ন দেশ দেশান্তরে ছড়াইয়া পড়ে। কারণ ঐ সকল দেশে বসবাসরত অধিবাসীদের উপরে নূহের জাতি অধিকতর প্রবল ও শক্তিশালী ছিল। কারণ তাহারা ঐ সকল দেশে অধিবাসীদিগকে হয় নির্মুল করিয়া দিয়াছিল অথবা গভীরভাবে আকৃষ্ট করিয়া বশীভূত করিয়া লইয়াছিল। এইভাবেই তাহারা তাহাদের নিজস্ব ঐতিহ্য এবং কৃষ্টি-সভ্যতাকে বিজিত ও পরাভূত দেশগুলিতে প্রবর্তন করিয়াছিল এবং এই কারণেই প্রলয়ঙ্করী মহাপ্লাবনের ঘটনাবলী সেই সকল দেশের লোক-গাথায় প্রবিষ্ট হইয়াছিল। যাহা হউক সময়ের ব্যবধানে ঐ সব ছড়াইয়া-পড়া উপনিবেশ স্থাপনকারীগণ মূল বাসস্থান হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়ে এবং নূহ (আঃ)-এর প্লাবনের ঘটনাবলী ঐ সব আঞ্চলিক ঘটনার নামে প্রচলিত হইয়া পড়ে। এই জন্যই সেই সকল স্থান ও মানুষের নামগুলিও আঞ্চলিক নামানুসারে পরিবর্তিত হইয়া মূল নামের স্থান দখল করিয়া বসে। অতএব, নিঃসন্দেহে এই কথা বলা যায় যে, নূহের (আঃ) মহাপ্লাবন বিশ্বব্যাপী আযাবরূপে নিপতিত হয় নাই। ভিন্ন ভিন্ন দেশের পরস্পরাগত মতবাদ অনুযায়ী পৃথক পৃথক বন্যা বলিয়াও সাব্যস্ত করা যায় না।