১৩১৭-ক

‘আল-জুদী’ পর্বত— বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইয়াকুত আলহাম ওয়াই-এর মতে জুদী হইতেছে এক সুদীর্ঘ পর্বতমালা যাহা মোসুল প্রদেশের টাইগ্রিস বা দজ্‌লা নদীর পূর্বদিকে অবস্থিত (মুজাম)। পাশ্চাত্যের খ্যাতনামা ইতিহাসবিদ মিঃ সেল বলিয়াছেন যে, ‘আল্‌জুদী’ ঐ সকল পর্বত মালার অন্যতম যাহা দক্ষিণ আর্মেনিয়াকে মেসোপটেমিয়া হইতে পৃথক করিয়াছে এবং ইহা আশিরিয়ার ঐ অংশ যেখানে প্রাচীন কার্ডস্ (Cards) জাতির বসবাস, তাহাদেরই নামানুসারে পর্বতটির নাম কার্ড (Cardu) বা গার্ডু (Gardu) রাখা হইয়াছিল। কিন্তু গ্রীকেরা ইহাকে গোড়দোই (Gordyoei) নামে পরিবর্তিত করিয়াছে…। বহু প্রাচীন কাল হইতে জনশ্রুতি চলিয়া আসিয়াছে বলিয়া ইহা ধারণা করা হয় যে, নূহের (আঃ) কিশতী এই জুদী পর্বতে আসিয়া ভিড়িয়াছিল এবং এইখানেই ঐ নৌকার ধ্বংসাবশেষ বিদ্যমান রহিয়াছে। ক্যালডিয়ন বা ব্যাবিলনের অধিবাসীদেরও একই বিশ্বাস (Berosus Apud Joseph Antiq.) এই অঞ্চলের প্রাচীন জনশ্রুতি রহিয়াছে যে, ইপিফানিয়াস (Epiphanius)-এর যুগে এইখানে এই পর্বত মালার উপরে নূহ্ (আঃ)-এর নৌকার ভগ্নাবশেষ দেখা যাইত। এবং জানা যায় যে, বাদশাহ হিরাক্লিয়াস থামানিন (Thamanin) শহর হইতে ‘আল জুদী’ পর্বত পর্যন্ত গিয়াছিলেন এবং নৌকার স্থানটি দেখিয়াছিলেন। সেই স্থানে অতীতে একটি প্রসিদ্ধ মঠও ছিল, উহা নৌকার মঠ নামে অভিহিত হইত। এই সব পর্বতমালার কোন একটির উপরে সেই কালে পুরোহিতগণ এক ভোজ দিবসের আয়োজন করিতেন, যেখানে নূহ (আঃ)-এর নৌকাটি আসিয়া লাগিয়াছিল বলিয়া তাহারা অনুমান করিত। কিন্তু ৭৭৬ খৃষ্টাব্দে সেই মঠটি বজ্রপাতে ধ্বস হইয়া গিয়াছিল (সেইল পৃঃ ১৭৯-১৮০)। ———জুদী (Djudi) পর্বতটি জাজিরা ইবনে ওমর হইতে প্রায় ২৫ মাইল উত্তর পূর্বদিকে বোহ্‌তান জিলায় অবস্থিত। ইহা একটি কঠিন প্রস্তরময় সুউচ্চ পাহাড় -– ইহার খ্যাতির মূলে রহিয়াছে মেসোপটেমিয়ার ঐতিহ্যবাহী অধিবাসীদের স্বীকৃতি যে, নূহ (আঃ)-এর নৌকা এইখানেই অর্থাৎ জুদী পাহাড়েই আসিয়া থামিয়াছিল, আরারাতে নহে।—বাইবেলের পুরাতন ভাষ্যকারগণের বর্ণনানুযায়ী এই জুদী পর্বতকেই সনাক্ত করিতেছে, এবং খ্যতনামা নির্ভরযোগ্য খৃষ্টান বর্ণনাকারীর মতে ইহাকেই গোর্দাইনি (Gordyene) নামে আখ্যায়িত করিয়াছে, যাহা ছিল প্লাবনের পরে নূহ (আঃ)-এর অবতরণ স্থল (এনসাইকো অব ইসলাম, ১ম খণ্ড ১০৫৯ পৃঃ)। ব্যাবিলনীয় রেওয়ায়াতেও আর্মেনিয়ার অন্তর্গত জুদী পর্বতেরই উল্লেখ রহিয়াছে (যিউ এনসাইকো, আরারত অধ্যায়)।বাইবেল স্বীকার করে যে, মহাপ্লাবনের পরে নূহ (আঃ)-এর বংশধরগণ ব্যাবিলনেই বসবাস করিত (আদি পুস্তক-১১ঃ৯)।