১১৭৩

মক্কার পতনের পরে হাওয়াযিন এবং সাকিফ গোত্র সেনাবাহিনীতে যোগদান করিয়াছিল এবং মুসলমানগণের উপর আক্রমণ করিতে অগ্রসর হইয়াছিল। রসূল করীম (সাঃ) মক্কা হইতে পনর মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে হুনায়ন প্রান্তরে তাহাদের মোকাবিলা করিয়াছিলেন। মক্কায় মুসলমান সেনাদলে যোগদানকারী ২,০০০ নবদীক্ষিত মুসলমানসহ ১২,০০০ হাজার সৈন্যের এক বাহিনী তাঁহার সঙ্গে ছিল। নবী করীম (সাঃ)-এর নিয়মের ব্যতিক্রমে এই নওমুসলিমদল তাড়াহুড়া করিয়া শত্রুকে আক্রমণ করিয়া বসে, কিন্তু দ্রুত প্রতিঘাতে হতভম্ব হইয়া যুদ্ধক্ষেত্র হইতে এলোপাতাড়ি পলায়ন করে।ইহার কারণে মুসলমান বাহিনী যাহারা সংকীর্ণ গিরিখাতের মধ্যে দিয়া অগ্রসর হইতেছিল তাহাদের মধ্যে চাঞ্চল্য ও বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়। এই ছত্রভঙ্গ অবস্থার মধ্যে আঁ-হযরত (সাঃ)-এর চারিপাশে রণক্ষেত্রে মাত্র ১০০ লোক ছিল। শত্রুপক্ষের তীরন্দাজবাহিনীর তীরগুলি তাঁহার চতুর্দিকে বৃষ্টির মত পড়িতেছিল। ইহা এক শ্বাসরুদ্ধকর চরম বিপদের মুহূর্ত। কিন্তু আল্লাহ্‌র প্রিয় নবী (সাঃ) তাঁহার বহনকারী খচ্চরকে শত্রুর দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য নির্ভিকভাবে পরিচালিত করিয়া যথাসাধ্য উচ্চকণ্ঠে আহ্বান করিয়া বলিয়া চলিলেন “আমি নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌র নবী—ইহাতে কোন মিথ্যা নাই, আমি আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র”। নবী (সাঃ)-এর চাচা আব্বাস (রাঃ) যিনি অত্যন্ত উচ্চ আওয়াজের অধিকারী ছিলেন, পলায়নপর মুসলমান সৈন্যগণকে তাঁহার প্রভুর নিকট ফিরিয়া আসার জন্য দাকিতে লাগিলেন। এই তুরীনিনাদের ন্যায় আহ্বান বিচারদিনের ভেরী ধ্বনীর মত মুসলমানদিগকে উত্তেজিত করিয়া তুলিয়াছিল, তাহারা অতি কষ্টে পুনঃশ্রেণীবদ্ধ হইয়া নেতার (নবী-সাঃ) নিকটে দ্রুত ফিরিয়া গেল এবং প্রচণ্ডভাবে শত্রুর উপরে ঝাঁপাইয়া পড়িল, শত্রুরা ভীত-সন্ত্রস্ত ও ছত্রভঙ্গ হইয়া পলায়ন করিল। তুলা-দণ্ড উল্টিয়া গেল। সেই দিনের যুদ্ধে মুসলমানদের নিদর্শন-মূলক বিজয় হইল এবং অন্যূন ৬০০০ কাফের বন্দী হইল (তাবারী ও হিশাম)।