“ওয়ারাক”এর শাব্দিক অর্থ কোন বস্তুর উৎকৃষ্ট ও তাজা অবস্থা, কোন সম্প্রদায়ের কিশোর, তরুণদল (লিসান)। ইহার মর্মার্থ হইতেছে যে, যখন শয়তান হযরত আদম (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যে মতভেদ ও বিভেদ সৃষ্টি করাতে কৃতকার্য হইল এবং উহার কতক দুর্বল সদস্য দল ত্যাগ করিয়া গেল, তিনি জান্নাত (বাগান)-এর “আওরাক” (পত্র বা পাতা) অর্থাৎ সম্প্রদায়ের তরুণদিগকে সংঘবদ্ধ করিলেন এবং তাহাদের সহায়তায় তাঁহার লোকদিগকে পুনঃ একতাবদ্ধ এবং পুনর্গঠিত করিতে আরম্ভ করিলেন। সাধারণতঃ ইহাই প্রতীয়মান হয় যে, তরুণ সম্প্রদায় প্রচলিত ধ্যান-ধারণা হইতে এবং পক্ষপাত-দুষ্টতা হইতে অনেকাংশে মুক্ত থাকে। ফলে তাহারা আল্লাহ্তা’লার নবীকে মান্য করে ও সাহায্য করিয়া থাকে (১০ঃ৮৪)। কুরআন মজীদের বর্ণনা অনুযায়ী যে ব্যক্তি আদম (আঃ)-এর অনুগত হইতে অস্বীকার করিয়াছিল তাহাকে ইবলিস্ নামে আখ্যায়িত করা হইয়াছে; অথচ যে ব্যক্তি তাঁহাকে প্রলুব্ধ করিয়াছিল তাহাকে ‘শয়তান’ বলা হইয়াছে। এই পার্থক্য কেবল ব্যাখ্যাধীন আয়াতেই দেখা যায় না, বরং ইহা কুরআনের সংশ্লিষ্ট সকল আয়াতে দেখা যায়। ইহা দ্বারা প্রতিপন্ন হয় যে, উক্ত বিবরণে উল্লেখিত ‘ইবলিস্’ এবং ‘শয়তান’ দুই ভিন্ন ব্যক্তি। প্রকৃত পক্ষে শয়তান শব্দ কেবল অসৎ আত্মাকেই বুঝায় না, অধিকন্তু ঐ সকল মানুষের জন্যও ব্যবহৃত হইয়া থাকে যাহারা তাহাদের অসৎকর্ম এবং প্রকৃতির কারণে রক্তমাংসের গঠিত দেহযুক্ত শয়তানরূপে যেন মূর্ত হইয়া উঠে। হযরত আদম (আঃ)-কে যে শয়তান প্রলুব্ধ করিয়াছিল এবং তাঁহার পদস্খলনের কারণ ঘটাইয়াছিল, সে কোন অদৃশ্য অসৎ আত্মা ছিল না, পরন্তু মানুষের মধ্য হইতেই রক্তমাংসের এক কুটিল অসৎ ব্যক্তি ছিল,—এক পাপিষ্ঠ শয়তানের বহিঃপ্রকাশও ইব্লিসের প্রতিনিধি। সে ঐ গোত্রের একজন ছিল, যাহার নিকট হইতে দূরে থাকার জন্য আদম (আঃ)-কে আদেশ করা হইয়াছিল। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, রসূল করীম (সাঃ) বলিয়াছেন যে, সেই ব্যক্তির নাম ছিল ’হারিস’ (তিরমিযী, কিতাবুত্ তফসীর) যদ্বারা আরো প্রতিপন্ন হয় যে, সে জড়দেহী মানুষ ছিল, কোন অশুভ শক্তি ছিল না।