এখানে ঐশী-বাণীকে বৃষ্টিধারার সঙ্গে তুলনা করা হইয়াছে। এবং যদি ঐশী-বাণী সত্যই আল্লাহ্তা’লার রহমত স্বরূপ হইয়া থাকে, তাহা হইলে যখনই কোন নবীর আর্বিভাব হইয়াছে তখনই কেন বিবাদ, শত্রুতা, মতভেদ ও লড়াই হইয়াছে? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হইয়াছে এই আয়াতে। ইহাতে বলা হইয়াছে যে, বৃষ্টি হইলে যেমন ভাল এবং মন্দ উভয় গাছপালাই মাটিতে সুপ্ত বা গুপ্ত বীজ অনুযায়ী বাড়িয়া উঠে, ঠিক তদ্রুপ আল্লাহ্র নবীর আবির্ভাবে মানুষ, যাহারা এতকাল পরস্পর মিশ্রিত অবস্থায় ছিল, তাহারা ভাল এবং মন্দ দুই ভাগে বিভক্ত হইয়া পড়ে। ‘সদৃশ’ এবং ‘বিসদৃশ’ শব্দদ্বয়ের অন্তর্নিহিত অর্থ হইতেছে যে, কতকগুলি ফল একে অন্যের অনুরূপ এবং কতকগুলি একটি অন্যটি হইতে ভিন্ন রূপ। বিভিন্ন প্রকার ফলের জন্য ইহা প্রযোজ্য হইতে পারে, সেগুলি কোন কোন দিকে একটি অন্যটির সদৃশ এবং অন্যদিক দিয়া বিসদৃশ, অথবা একই শ্রেণীর ফলের জন্য প্রযোজ্য যদিও সেগুলি মোটামুটি প্রায় এক রকম, তবে সামান্য বৈসাদৃশ্য রহিয়াছে, কতকগুলি অন্যগুলি হইতে বেশী মিষ্ট এবং কতকগুলি আবার রং বা আকারে বিসদৃশ। অনুরূপভাবে মানুষের মধ্যেও যাহারা আল্লাহ্তা’লার প্রেরিত নবীকে গ্রহণ করে এবং ঐশী নির্দেশ মানিয়া চলে তাহাদের ক্ষেত্রেও ইহা প্রযোজ্য। তাহারা একজন অন্য জনের সহিত এক বিষয়ে বিশেষ সাদৃশ্য বহন করে, আবার অন্য বিষয়ে বিসদৃশ হইয়া থাকে। কেহ কেহ অন্যান্যদের হইতে নৈতিক ও আধ্যাত্মিকভাবে অধিক অগ্রগামী হইয়া থাকে। আবার কেহ কেহ আধ্যাত্মিক উন্নতির ক্ষেত্রে এক ধাপ বেশী অগ্রগতি লাভ করে, অন্যেরা ভিন্ন স্তরে অধিক আগে বাড়িয়া যায়। তাহারা আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ে সিদ্ধিলাভ করে, এবং তাহাদের মধ্যে নিজ নিজ প্রাকৃতিক যোগ্যতা ও স্বাভাবিক মেযাজ অনুযায়ী ভিন্নরূপ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণাদি প্রকাশ পায়। “উহার পরিপক্কতা” শব্দদ্বয় ফল পাকিয়া যাওয়ার উপমা দ্বারা বিভিন্ন বস্তু বা বিষয়ের মধ্যে কোন কোন দিক দিয়া সাদৃশ্য প্রকাশ করিতেছে। ঠিক যেমন একটি অপক্কফলের নমুনা দ্বারা সেই শ্রেণীর সমস্ত ফলের বিচার করা অশোভন, তেমনি ঐশীবাণীর ফলাফলের মধ্যে ত্রুটি খুঁজিয়া বাহির করার প্রচেষ্টাও অন্যায়—কারণ বিশ্ববাসীগণের মধ্যে কোন কোন ব্যক্তি তখনও আধ্যাত্মিক উন্নতির পর্যায়ে অগ্রসরমান রহিয়াছে এবং পূর্ণতায় পৌঁছে নাই।