৮৭০

বর্তমান এবং পূর্ববর্তী দুই আয়াতে হযরত নূহ (আঃ) হইতে উদ্ভূত নবীগণকে ভিন্ন ভিন্ন তিন ভাগে বিভক্ত করা হইয়াছে এবং প্রত্যেক বিভাগের জন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বিশেষণের ব্যবহার করা হইয়াছে। প্রথম শ্রেণীভুক্ত নবীগণ হইলেন হযরত দাউদ, সুলায়মান, আইউব, ইউসুফ, মূসা এবং হারূন (আঃ) যাহাদিগকে ক্ষমতা ও উন্নতি দেওয়া হইয়াছিল এবং ফলস্বরূপ তাঁহারা সমসাময়িক মানব গোষ্ঠীর মঙ্গল সাধনে সক্ষম ছিলেন। এই জন্য এই শ্রেণীর বা সম্প্রদায়ের সদস্যগণকে সৎকর্মশীল নামে আখ্যায়িত করা হইয়াছে। কারণ জাগতিক শক্তি ও সৌভাগ্য বলে তাঁহারা স্বজাতির বাস্তব উপকার করিতে সক্ষম ছিলেন। হযরত দাউদ (আঃ) এবং হযরত সুলায়মান (আঃ) বাদশাহ ছিলেন। হযরত ইউসুফ ও আইউব (আঃ) অসাধারণ ও অপরিসীম ধৈর্যের সাথে অশেষ দুঃখ কষ্টপূর্ণ অগ্নিপরীক্ষার পর সাফল্য ও সৌভাগ্যে ভূষিত হইয়াছিলেন। হযরত মূসা ও হারূন (আঃ) তাঁহাদের সম্প্রদায়ের লোকের উপর সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের অধিকারী ছিলেন।

দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন হযরত যাকারীয়্যা, ইয়াহ্ইয়া, ঈসা এবং ইলিয়াস (আঃ)। এই নবীগণের মধ্যে কেহই পার্থিব ক্ষমতা অথবা জাগতিক সৌভাগ্যের অধিকারী ছিলেন না, প্রত্যেকে খুবই বিনম্র ও বিনীত এবং অজ্ঞাত জীবন যাপন করিতেন। এমনকি, হযরত ইলিয়াস (আঃ) সম্বন্ধে বর্ণিত আছে যে, তিনি কদাচিৎ দৃষ্টিগোচর হইতেন এবং সাধারণতঃ বন-বাদাড়েই থাকতেন। এই বিভাগের বা শ্রেণীভুক্ত নবীগণকে ধার্মিক বা খোদাভক্ত বলিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে।

তৃতীয় শ্রেনিতে রহিয়াছেন হযরত ইসমাঈল, আলইয়াসায়া, ইউনুস,আবং লূত (আঃ)। তাহাদের পার্থিব ক্ষমতা ছিল না, আল্লাহ্‌তা’লা তাঁহাদিগকে সম্মান এবং মর্যাদায় ভূষিত করিয়াছিলেন। ক্ষমতা এবং ধনলিপ্‌সার দুর্নামও রটনা করা হইত তাঁহাদের সম্পর্কে। হযরত ইসমাঈল (আঃ) সম্বন্ধে বাইবেলে আমরা দেখিঃ “তিনি বন্য মানব হইবেন, তাঁহার হাত প্রত্যেক মানুষের বিরুদ্ধে উদ্যত হইবে এবং প্রত্যেক মানুষের হাত তাঁহার বিরুদ্ধে” (আদিপুস্তক-১৬ ঃ১২)। হযরত আল্ইয়াসায়া সম্পর্কে কথিত আছে যে, তিনি রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করিবার মতলবে এক রাজাকে তাঁহার বশ্যতা স্বীকার না করার জন্য হত্যা করাইয়াছিলেন। ইউনুস (আঃ) সম্পর্কে ধারণা করা হইয়া থাকে যে, তিনি আল্লাহ্‌তা’লার প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন, কারণ তিনি ভাবিয়াছিলেন, তাঁহার ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ না হওয়ায় তিনি অপদস্থ হইয়াছিলেন। সেই ভবিষ্যদ্বাণীর দ্বারা তিনি নাকি ক্ষমতার অভিলাষ করিয়াছিলেন। হযরত লুত (আঃ)-এর নামে অপবাদ রটানো হয় যে, তিনি অন্যায়ভাবে উর্বর চারণভূমির লালসা করিয়াছিলেন এবং তাঁহার জ্ঞাতি ইব্‌রাহীম (আঃ)-এর সঙ্গে সর্বদা ফ্যাসাদ করিতেন। এহেনভাবে উক্ত নবীগণ সম্পর্কে ধনসম্পদ এবং ক্ষমতা লিপ্সার অপবাদ দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু মহাপবিত্র গ্রন্থ কুরআন এই সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা বলিয়া ঘোষণা করিয়া বলিয়াছে যে, তাঁহারা আল্লাহ্‌তা’লার প্রেরিত বান্দা ছিলেন যাঁহাদিগকে তিনি গৌরবান্বিত করিয়াছিলেন।