এই আয়াতটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইহা ব্যক্ত করিতেছে যে, মুসলমানদের জন্য আধ্যাত্মিক উন্নতির সকল দরজা খোলা রহিয়াছে। চারটি আধ্যাত্মিক পদ-মর্যাদা যথা নবী, সিদ্দীক শহীদ ও সালেহ্-– এই চারটি আধ্যাত্মিক পদমর্যাদাই হযরত রসূলে আকরাম (সাঃ)-এর অনুসরণের ফলে লাভ করা যায়। একমাত্র হযরত নবী (সাঃ)-এর জন্যই অনন্য মহাসম্মান সংরক্ষিত রহিয়াছে। এই সম্মান অন্য কোন নবী লাভ করেন নাই। হযরত নবী করীম (সাঃ)-এর ক্ষেত্রে এবং তাঁর অনুসারীদের ক্ষেত্রে উপরোক্ত অর্থ যে সত্য, তাহা কুরআনের ৫৭ঃ২০ আয়াত পাঠেও উপলব্ধি করা যায়, যেখানে সাধারণভাবে নবীগণ ও তাহাদের অনুসারীগণের কথা বলিতে গিয়া বলা হইয়াছে “যাহারা আল্লাহ্ ও তাঁহার রসূলগণের উপর ঈমান আনিয়াছে তাহারা তাহাদের প্রভুর নিকট সিদ্দীক ও শহীদগণের পর্যায়ভুক্ত”। এই দুইটি আয়াতকে (৪ঃ৭০ এবং ৫৭ঃ২০) একত্রে মিলাইয়া পাঠ করিলে দেখা যায় যে, অন্যান্য নবীগণের অনুসারীরা যে স্থলে সিদ্দীকের, শহীদের এবং সালেহদের মর্যাদায় ভূষিত হইতে পারিয়াছেন, তদূর্ধ মর্যাদায় যাইতে পারেন নাই, সেই স্থলে হযরত নবী করীম (সাঃ)-এর অনুসারীরা নবীর মর্যাদা লাভ করিতে পারেন। আল্ ‘বাহ্রুল মুহীতে’ (৩য় খণ্ড, পৃঃ ২৮৭) ইমাম রাগেবের একটি উদ্ধৃতি সন্নিবেশিত হইয়াছে। তাহা এই “আল্লাহ্ এই আয়াতে মুসলিম উম্মতকে চার শ্রেণীতে ভাগ করিয়া তাহাদের জন্য চারটি স্তর নির্ধারণ করিয়াছেন। এই স্তরগুলির কয়েকটি অন্য কয়েকটির নীচে এবং আল্লাহ্ চাহিয়াছেন, “মো’মেনরা যেন নীচের স্তরে থাকিয়া না যায় বরং উচ্চতম স্তরে পৌঁছার চেষ্টা করে।” উহাতে আরও বলা হইয়াছে, “নবুওয়াত দুই প্রকারের— সাধারণ ও বিশেষ। বিশেষ প্রকারের নবুওয়াত, যাহা শরীয়তবাহী, তাহা অপ্রাপ্য অর্থাৎ উহা প্রাপ্তির পথ রুদ্ধ, কিন্তু সাধারণ নবুওয়াত লাভের পথ উন্মুক্ত রহিয়াছে অর্থাৎ কেবল আঁ-হযরত (সাঃ)-এর পূর্ণ অনুকরণ এবং অনুসরণের মাধ্যমে শরীয়াত-বিহীন উম্মতী নবুওয়াতের নেয়ামতের দ্বার উন্মুক্ত রহিয়াছে।”