এই আয়াতে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে সকল নিকট আত্মীয়ের অংশ নির্ধারণ করিয়া দেওয়া হইয়াছে। স্ত্রী-পুরুষ ও বয়স নির্বিশেষে সকলেই যথাযোগ্য অংশ পাইবে। মৃত ব্যক্তির সন্তান, পিতামাতা, স্বামী বা স্ত্রী হইল মূল উত্তরাধিকারী, তাহারা জীবিত থাকিলে সর্বাবস্থায়ই নির্দিষ্ট অংশ লাভ করিবে। অন্যান্য আত্মীয় বিশেষ অবস্থায় অংশ পাইতে পারে। একজন পুরুষকে একজন স্ত্রীলোকের অংশের দ্বিগুণ দেওয়া হইয়াছে, এই কারণে যে, পুরুষকে পরিবার প্রতিপালনের দায়িত্ব বহন করিতে হয় (রূহুল মাআনী, ২য় অঃ, পৃঃ-৩২)। পুত্র ও কন্যার প্রাপ্য অংশের অনুপাত নির্ধারণ করিয়া আয়াতটি বন্টন-ব্যবস্থার কথা শুরু করিয়াছে। একজন পুত্র দুইজন কন্যার সমান পাইবে। যে ক্ষেত্রে পুত্র-কন্যা উভয়ই বিদ্যমান থাকিবে, সেখানেই এই নিয়ম কার্যকরী হইবে। যেখানে কেবল কন্যা থাকিবে, পুত্র থাকিবে না, সেখানে কন্যাগণ সকলে মিলিয়া পরিত্যক্ত মোট সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ পাইবে, যদি তাহারা সংখ্যায় দুই-এর অধিক হয়। আর যদি একমাত্র সন্তান কন্যাই হয়, তাহা হইলে সে পাইবে সম্পত্তির অর্ধেকাংশ। যদি পুত্রহীন পিতার মাত্র দুইটি কন্যা সন্তান থাকে, তাহা হইলে দুই কন্যা মিলিয়া পিতৃসম্পত্তির কত অংশ পাইবে, তাহা সুস্পষ্ট ভাবে বলা হয় নাই। তবে বাক্যাংশটিতে (কিন্তু) অব্যয় ‘ফা’ ব্যবহার করা হইয়াছে যথা— কিন্তু, যদি কন্যারাই কেবল (উত্তরাধিকারী) হয় এবং তাহারা দুই-এর অধিক হয়। ইহাদ্বারা বুঝা যায় পূর্ববর্তী বাক্যে ‘দুই কন্যার’ উল্লেখের প্রতি ‘ফা’ (কিন্তু) অব্যয়ের সংযোগ রহিয়াছে, সেখানে দুই কন্যার অংশ নির্ধারিত হইয়াছে। তাহাছাড়া দুই কন্যার অংশ আমরা এই আয়াতের প্রথমে পাইয়া যাই, যেখানে স্ত্রী-পুরুষের অংশের অনুপাত নির্ধারণ করিয়া বলা হইয়াছে কন্যা দুইজন মিলিয়া একপুত্রের সমান। অতএব, যদি কোন ক্ষেত্রে এক পুত্র ও এক কন্যা থাকে,তাহা হইলে পুত্র দুই-তৃতীয়াংশ পাইবে আর কন্যা এক-তৃতীয়াংশ। কিন্তু যেহেতু দুই কন্যা এক পুত্রের সমান পাইবে, অতএব এই ক্ষেত্রে দুই কন্যার অংশও হইবে দুই-তৃতীয়াংশ। দুই বা ততোধিক কন্যার জন্য অপুত্রক পিতার সম্পতিতে দুই-তৃতীয়াংশ উত্তরাধিকার নির্ধারিত হইয়াছে। শুধু মাত্র দুই কন্যা থাকাবস্থায়, তাহারা কত অংশ পাইবে, এই কথা না বলাই যদি কুরআনের উদ্দেশ্য হইত, তাহা হইলে এই বাক্যাংশটি উক্ত প্রকারে ব্যক্ত না হইয়া বরং এইরূপ হইত, “একজন পুরুষের জন্য দুইজন নারীর অংশের সমান”। পিতামাতা অংশ প্রাপ্তির ব্যাপারে, তিন অবস্থায়, তিনটি শর্তের অধীনে, তিন ধরণের অংশ হইতে পারেঃ (১) যদি কোন ব্যক্তি এক বা একাধিক সন্তান রাখিয়া যান, তাহা হইলে পিতামাতা জীবিত থাকিলে প্রত্যেকে পাইবে এক-ষষ্ঠাংশ, (২) সন্তানহীন অবস্থায় মারা গেলে এবং স্ত্রী-স্বামী কেহ না থাকিলে, পিতা-মাতাই একমাত্র উত্তরাধিকারী হইবেন, সেই ক্ষেত্রে মাতা সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ পাইবেন এবং পিতা দুই-তৃতীয়াংশ পাইবেন; (৩) তৃতীয় অবস্থা, একটি বিশেষ অবস্থা, যাহা দ্বিতীয় অবস্থার ব্যতিক্রম মাত্র। উপরোক্ত (২) এ এই মৃত ভ্রাতা-ভগ্নীর উল্লেখ নাই। যদি মৃতের ভ্রাতা-ভগ্নী থাকে তাহা হইলে, মৃতের মাতা এক-ষষ্ঠাংশ পাইবেন এবং পিতা পাইবেন পাঁচ-ষষ্ঠাংশ। পিতাকে এই ক্ষেত্রে আনুপাতিক হারে বেশী দিবার কারণ হইল, মৃতের ভাই-ভগ্নীর লালন পালনের ভার তাহার পিতার উপরেই বর্তায়। এই ক্ষেত্রে, মৃতের ভাই-বোনেরা উত্তরাধিকার সূত্রে কিছুই সরাসরি পাইতেছে না। পরবর্তী আয়াতেও উত্তরাধিকারের বিষয়ই রহিয়াছে।