কথাটির অর্থ এই নয় যে, স্ত্রীলোক পুরুষের অঙ্গ বিশেষ হইতে সৃষ্ট হইয়াছে। ইহার তাৎপর্য এই যে, স্ত্রীলোক ও পুরুষ একই জাতীয়, একই শ্রেণীভুক্ত; একই ধরণের স্বভাব, প্রাকৃতিক প্রয়োজন, প্রবৃত্তি এবং ধীশক্তির অধিকারী। ‘আদমের পাঁজরের হাড় হইতে হাওয়ার সৃষ্টি’-এই ধারণাটা মনে হয়, হযরত রসূলে করীম (সাঃ)-এর এই হাদীসটি হইতে উৎপন্ন হইয়াছে, “স্ত্রীলোকেরা পঞ্জরাস্থি হইতে সৃষ্ট হইয়াছে এবং এই অস্থির সর্বোচ্চ স্থানটি সর্বাপেক্ষা বেশী বক্র; ইহাকে সোজা করিতে গেলে, তুমি ইহা ভাঙ্গিয়া ফেলিবে” (বুখারী, নিকাহ অধ্যায়)। রসূলে পাক (সাঃ)-এর এই বাক্যটিকে যতভাবেই ব্যাখ্যা করা হউক না কেন, এই বাক্য “হাওয়া আদমের পঞ্জরাস্থি হইতে সৃষ্ট”— ধারণার পরিপোষক তো নয়ই, বরং ইহার বিপরীত। কারণ এই বাক্যে ‘হাওয়া’র কোন নাম গন্ধই নাই, বরং পূর্বাপর সকল নারীর জন্যই এই বাক্যটি সমভাবে প্রযোজ্য। আর এই কথাও সকলেরই জানা যে, প্রত্যেক নারীকে পঞ্জরাস্থি হইতে বানানো হয় নাই। নবী করীম (সাঃ)-এর বাক্যে যে ‘যিলউন’ (পঞ্জর) শব্দটির ব্যবহার হইয়াছে, উহার তাৎপর্য হইল, ব্যবহার ও চলন-বলনের বক্রতা, শব্দটির নিজস্ব অর্থও বক্রতা (বিহার ও মুহীত)। বস্তুতঃ এই হাদীসটিতে স্ত্রীলোকের স্বভাবের একটি বিচিত্র বৈশিষ্ট্যকে তুলিয়া ধরা হইয়াছে। তাহা হইল, অসন্তুষ্টির ভান, বিরাগের ছলনা ইত্যাদি। এই যে “বক্রতা” (মহানবী (সাঃ)-এর বাক্যে) ইহাকে স্ত্রী-চরিত্রের উচ্চতম ও সুন্দরতম গুণ বলা হইয়াছে। যাহারা স্ত্রীলোকের রাগের ভান করাটাকেই প্রকৃত রাগের প্রকাশ মনে করিয়া তাহার উপর পাল্টা রাগিয়া যায় ও কঠোর ব্যবহার শুরু করিয়া দেয়, তাহারা স্ত্রী-ব্যক্তিত্বের সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় ও আত্মী-করণীয় গুণটাকেই নষ্ট করিয়া ফেলে।