৪২৬-ক

অনেকেই ভুলবশতঃ মনে করেন যে, এই আয়াত ইসলামের সাথে খৃষ্টান-ইহুদী ধর্মের একটা সমঝোতার ভিত্তি প্রদান করিয়াছে। তাহারা যুক্তি দেখান যে, যদি ঐ ধর্ম দুইটিও আল্লাহ্‌র একত্বকে মানে ও তাহাই প্রচার করে, তাহা হইলে ইসলামের অন্যান্য বিশ্বাস যাহা তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলিকে নিয়া বাড়াবাড়ি না করাই ভাল। ইহা অভাবনীয় বিষয় যে, পূর্ববর্তী কয়েকটি আয়াতে যাহাদের মিথ্যা বিশ্বাসগুলির কারণে তাহাদিগকে কঠোরভাবে ভর্ৎসনা করা হইল, এমনকি তাহাদের প্রতি ‘মুবাহালার’র চ্যালেঞ্জ প্রদান করা হইল, তাহাদেরই সাথে বিশ্বাসের ব্যাপারে সমঝোতা হইতে পারে। মহানবী (সাঃ) এই আয়াত উল্লেখপূর্বক হিরাক্লিয়াসের কাছে প্রচার-পত্র লিখিয়াছিলেন এবং একই পত্রে তাহাকে তিনি অতি জোরের সহিত ইসলাম-গ্রহণেরও তাকিদ দিয়াছিলেন। এমনকি ইসলাম গ্রহণ না করিলে তাহার উপর আল্লাহ্‌র শাস্তি অবতীর্ণ হইবে বলিয়াও তিনি সতর্ক করিয়াছিলেন (বুখারী)। ইহাতে বুঝা যায় যে, কেবলমাত্র আল্লাহ্‌র একত্ব স্বীকারের দ্বারা সম্রাট হিরাক্লিয়াস ঐশী-শাস্তি হইতে রক্ষা পাওয়ার যোগ্য হইতেন না, ইহাই ছিল মহানবী (সাঃ)-এর অভিমত। বাস্তবিক পক্ষে, ইহুদী ও খৃষ্টানগণকে ইসলামের সত্যতা নির্ণয়ে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে, এই আয়াত সহজ ও সরল পন্থা বাতলাইয়া দিয়াছে মাত্র। আল্লাহ্‌র একত্বকে স্বীকার করা সত্বেও খৃষ্টানগণ যীশুর ঈশ্বরত্বে বিশ্বাস করে। ইহুদীগণ গোঁড়া একত্ববাদী বলিয়া দাবী করা সত্বেও, তাহারা তাহাদের পুরোহিত পীরগণকে অন্ধের মত অনুসরণ করিয়া, আল্লাহ্‌র আসনে বসাইয়া রাখিয়াছে—আর ইহাই তাহাদের ইসলাম গ্রহণে বাধা হইয়া দাঁড়াইয়াছে। তাই এই আয়াতে তাহাদিগকে ঐসব মিথ্যা-খোদার উপাসনা ছাড়িয়া, তাহাদের আদত ও খাটি তৌহীদকে অবলম্বনের আহবান জানানো হইয়াছে যাহা এখন কেবল ইসলামেই জীবন্তভাবে মওজুদ রহিয়াছে। অতএব, ধর্মীয় সমঝোতা স্থাপনের পরিবর্তে এই আয়াত তাহাদিগকে প্রকৃতপক্ষে আহবান করিতেছে যে, আল্লাহ্‌র একত্বকে, বাহ্যিকভাবে হইলেও সাধারণ ভিত্তিস্বরূপ ধরিয়া, ধর্মগুলির সত্যাসত্য যাচাই করা যাইতে পারে এবং ফলশ্রুতিতে ইসলামের সত্যতায় পৌঁছানো যাইতে পারে। ইহা তাহাদের প্রতি, ইসলাম গ্রহণের জন্য, এক ধরণের দাওয়াৎ বিশেষ। প্রসঙ্গক্রমে, এখানে উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, এই আয়াতকে অবলম্বন ও উদ্ধৃত করিয়া মহানবী (সাঃ), বুখারী ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত মতে, যে পত্র হিরাক্লিয়াস, মিশর-রাজ মুকাওকিস ও অন্যান্য শাসক বর্গকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াৎ দিয়া লিখিয়াছিলেন, সেই পত্র আবিষ্কৃত হইয়াছে এবং দেখা গিয়াছে যে, বুখারী শরীফে পত্রটির যে লিখন (টেক্সট) লিপিবদ্ধ আছে, ঐ আবিষ্কৃত পত্রটিতে অবিকল ঐ শব্দাবলীই রহিয়াছে, একটুও অমিল নাই (আর, রিল, ভল, ৫নং ৮)। এই ঘটনা সন্দেহাতীতভাবে বুখারী শরীফের হাদীসসমূহের বিশুদ্ধতাকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং সাধারনভাবে অন্যান্য সংকলিত হাদিস প্রস্থের সত্যতার প্রমাণও বহন করে।