‘মুতাওয়াফ্ফি’, ‘তাওয়াফ্ফা’ শব্দ হইতে উৎপন্ন। আরবীতে বলা হয়- ‘তাওয়াফ্ফাল্লাহু যায়ূদান’ অর্থাৎ ‘আল্লাহ্ যায়দের আত্মাকে উঠাইয়া লইলেন’, যাহার মানে হইল আল্লাহ্ যায়দকে মৃত্যু দিলেন। যেখানে ‘আল্লাহ্ কর্তৃবাচক হন এবং ‘মানুষ’ কর্ম-বাচক হয়, আর ‘তাওয়াফ্ফা’ হয় ক্রিয়া, সেখানে ‘তাওয়ফ্ফার’ অর্থ আত্মাকে লইয়া যাওয়া বা মৃত্যুদান করা ছাড়া অন্য কোনও অর্থ কখনও হয় না। ইব্নে আব্বাস ‘মুতাওয়াফফিকার’ অনুবাদ করিয়াছেন ‘মুমিতুকা’, অর্থাৎ আমি তোমাকে মৃত্যু দিব (বুখারী-কিতাবুত্তফসীর)। অনুরূপভাবে আল্লামা যামাখ্শরী, যিনি আরবী ভাষাবিদগণের অন্যতম,বলেন, ‘মুতাওফ্ফিকা’র অর্থ ‘আমি তোমাকে মানুষের হত্যা করা হইতে বাঁচাইব,তোমার জন্য নিদ্ধারিত পূর্ণ বয়ঃক্রম পর্যন্ত তোমাকে বাঁচাইয়া রাখিব এবং তোমাকে স্বাভাবিক ভাবে মৃত্যু দিব, তোমাকে নিহত হইতে দিব না (কাশ্শাফ)’। বস্তুতঃ, আরবী ভাষাবিদেরা ঐক্যমত পোষণ করেন যে, উপরোক্ত ভাবে যখন ‘তাওয়াফ্ফা’ ক্রিয়াটি ব্যবহৃত হয়, তখন ইহার অন্যরূপ অর্থ কখনও হইতে পারে না। সমস্ত আরবী সাহিত্য ঘটিয়াও, এই শব্দের অন্য অর্থে ব্যবহারের একটি দৃষ্টান্ত পাওয়া যাইবে না। অনন্য সাধারণ জ্ঞানের অধিকারী স্বনামধন্য তফসীরকারক ইবনে আব্বাস, ইমাম মালিক, ইমাম বুখারী, ইমাম ইবনে হায্ম্, ইমাম ইবনে কাইয়ীম, ক্বাতাদা, ওয়াহ্হাব এবং অন্যান্যরাও এই বিষয়ে একমত (বুখারী, তফসীর অধ্যায়, বুখারী, বাদাউল খাল্ক অধ্যায়, বিহার, আল-মুহাল্লা, মাদ পৃঃ ১৯, মনসুর, ২য়, কাসীর)। এই শব্দটি কুরআনের বিভিন্ন স্থানে ২৫ বার ব্যবহৃত হইয়াছে, তেইশটি স্থলেই ব্যবহৃত হইয়াছে মৃত্যুর সময় আত্মাকে লইয়া যাওয়া অর্থে। কেবল মাত্র দুইটি স্থলে ঘুমের মধ্যে আত্মাকে লইয়া যাওয়া অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে, এবং দুই স্থলেই ঘুম ও রাত্রি শব্দ ব্যবহার দ্বারা ‘তাওয়াফফাকে’ বিশেষিত করা হইয়াছে (৬ঃ৬১, ৩৯ঃ ৪৩)। এই সত্যকে চাপা দিবার কোনও সুযোগ নাই যে, ঈসা (আঃ) মৃত্যুবরণ করিয়াছেন। রসূলে করীম (সাঃ) স্বয়ং বলিয়াছেন যে, “মূসা ও ঈসা যদি এখনও জীবিত থাকিতেন, তাহা হইলে তাহারা আমার অনুসরণ ও অনুগমন করিতে বাধ্য হইতেন” (কাসীর)। এমন কি তিনি বলিয়াছেন যে, ঈসা (আঃ)-এর বয়স ছিল ১২০ বৎসর (কানযুল উম্মাল)। কুরআন ৩০টি আয়াত দ্বারা, ঈসা (আঃ)-এর আকাশে গমন ও সেখানে সশরীরে জীবিত অবস্থায় অবস্থান করার অলীক ধারণাকে একেবারে ধূলিসাৎ করিয়া দিয়াছে।