৪১৯

পুত্র প্রাপ্তির সংবাদ যদিও অত্যন্ত সুখকর বিষয়, তথাপি অবিবাহিতা মরিয়মের জন্য ইহা ছিল এক বিব্রতকর ব্যাপার। কেননা, তাঁহার জীবনতো ভবিষ্যতেও অবিবাহিত থাকিবার জন্যই নিবেদিত ও নির্ধারিত। এই আয়াত তাঁহার মনের হতবুদ্ধি অবস্থাকে যুক্তিযুক্ত সাব্যস্ত করিতেছে। এই আয়াতদ্বারা ইহাও প্রমাণিত হয় যে, ঈসা (আঃ)-এর কোনও পিতা ছিল না, মরিয়মের উক্তি ‘কোন মানুষ আমাকে স্পর্শ করে নাই’ বাক্যের মধ্যেই তাহা সুস্পষ্টরূপে বুঝা যায়। মরিয়মের সম্পূর্ণ জীবন উপাসনালয়ের নামে উৎসর্গীকৃত থাকায় এবং ভবিষ্যতে বিবাহ করা উৎসর্গীত জীবনের সাথে সঙ্গতিহীন হওয়ায়, তাহাকে সন্ন্যাসিনী হইয়া থাকিতে হইবে। যদি তাহা না হইত এবং তাঁহার বিবাহের সম্ভাবনার কথা তাঁহার চিন্তায় কখনও আসিত, তাহা হইলে তিনি পুত্র-সন্তান প্রাপ্তির ভবিষ্যত সংবাদ ফিরিশ্‌তা হইতে অবগত হইয়া আশ্চর্যান্বিত হইতেন না। মরিয়মের সুসমাচারে আমরা মরিয়মের কুমারী ব্রতের প্রতিজ্ঞার কথা স্পষ্টাক্ষরে দেখিতে পাই। উক্ত সুসমাচারের পঞ্চম অধ্যায়ে আছেঃ উপাসনালয়ের প্রধান পুরোহিত সাধারণ হুকুম জারি করিলেন যে, উপাসনালয়ে বসবাসকারী যে সকল কুমারী মেয়ের বয়স চৌদ্দ বৎসর হইয়াছে, তাহারা বাড়ীতে ফিরিয়া যাইবে। সকল কুমারীরাই এই আদেশ পালন করিল। কিন্তু ‘প্রভুর কুমারী মরিয়ম’ একমাত্র মেয়ে যিনি উত্তর দিলেন যে, তিনি এই আদেশ পালনে অসমর্থ, কেননা তিনি এবং তাঁহার পিতা-মাতা তাহাকে প্রভুর সেবায় উৎসর্গ করিয়াছেন। তাছাড়া, তিনি প্রভুর নিকট কুমারীত্ব পালনের শপথ নিয়াছেন, যাহা তিনি কোনও অবস্থায়ই ভঙ্গ করিবেন না বলিয়া প্রতিশ্রুতিবদ্ধ (মরিয়মের সুসমাচার- ৫ঃ৪,৫,৬)। পরবর্তীকালে যোসেফের সহিত তাহার বিবাহ, তাঁহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এবং তাঁহার শপথের বিরুদ্ধে, তাঁহার উপর চাপাইয়া দেওয়া হইয়াছিল। ছেলের মা হওয়ার কারণে, অবস্থার চাপে পড়িয়া, তিনি বাধ্য হইয়াছিলেন এবং যাজকেরা দুর্নাম হইতে বাঁচিবার জন্য এই বিবাহের আয়োজন করিয়াছিল। সুসমাচার হইতে একথা বুঝা যায় না, যোসেফকে এই বিবাহে কিভাবে সম্মত করা হইয়াছিল। তবে ইহা স্বতঃসিদ্ধ যে, মরিয়ম ঐ সময়ে সন্তান-সম্ভবা, তাহা যোসেফ মোটেই জানিতেন না (মথি- ১ঃ১৮,১৯)। সম্ভবতঃ মরিয়মের শপথ ভঙ্গের কোনও একটা যুক্তিগ্রাহ্য বাহানা আবিষ্কার করা হইয়াছিল। ঈসা (আঃ)-এর জন্ম বৃত্তান্তের বিশদ বিবরণ ১৭৫০-১৭৫৫ টীকা দেখুন।