এই আয়াতে তালাকের (বিবাহ-বিচ্ছেদ) পঞ্চম বাধাটি বর্ণিত হইয়াছে। যে ব্যক্তি বিবাহ-বিচ্ছেদ কামনা করে, তাহাকে তিনবার পৃথক-পৃথকভাবে তিন মাসে তালাকের ঘোষণা প্রকাশ করিতে হইবে। প্রত্যেকটি তালাকের ঘোষণা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে, স্ত্রীর তিনটি ঋতু-মুক্তির সময়ে সহবাস না করা অবস্থায় উচ্চারিত হইতে হইবে। একই সময়ে পরপর তিনবার বা দুইবার তালাক উচ্চারণ অনুমোদনযোগ্য নয়। “মাররাতান” (দুইবার) শব্দ দ্বারা ইহাই বুঝায় যে, দুইটি ভিন্ন সময়ে ইহা ঘটিতে হইবে; একই সময়ে দুইবার ঘটতে পারে না। হযরত রসূল করীম (সাঃ) একই সময়ে বহুবার “তালাক” উচ্চারণকে, ‘এক তালাক’ গণ্য করিতেন (তিরমিযি ও দাউদ)। নিসাই হইতে বর্ণিত আছে যে, একবার আঁ-হযরত (সাঃ) কে বলা হইল যে, এক ব্যক্তি একই নিশ্বাসে তিনবার তালাক উচ্চারণ করিয়াছে। তিনি ইহাতে অত্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করিয়া বলিলেন, “কী ! আমি তোমাদের মধ্যে বর্তমান থাকাবস্থায়ই তোমরা আল্লাহ্র গ্রন্থকে (কুরআনকে) খেলার বস্তু বানাইবে?” প্রথম দুইবারের তালাকের ক্ষেত্রে, মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে স্বামী স্বীয় স্ত্রীকে, স্ত্রীর সম্মতি-অসম্মতি ব্যতিরেকেইে পুনঃ গ্রহণ করিতে পারে। কিন্তু মধ্যবর্তী সময় অতিক্রান্ত হইয়া গেলে, কেবল স্ত্রীর অনুমতি নিয়া পুনর্বিবাহের মাধ্যমে তাহাকে পুনঃগ্রহণ করা যাইতে পারে। কিন্তু তৃতীয় বার তালাক ঘোষণার পর, স্বামীর আর কোন সুযোগ বা অধিকার থাকে না এবং পুরাপুরি বিচ্ছেদ ঘটিয়া যায়। এক সাহাবী একদিন রসূল করীম (সাঃ)কে জিজ্ঞাসা করিলেন, কুরআনতো মাত্র দুইটি তালাকের উল্লেখ করিয়াছে, তৃতীয়টি কোথা হইতে আসিল? উত্তরে রসূল করীম (সাঃ) এই আয়াতে “অথবা সদয়ভাবে বিদায় দিতে হইবে” বাক্যটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করিলেন। ইহার তাৎপর্য এই যে, প্রথম দুইবার তালাকের পরও স্বামী স্ত্রীকে রাখিতে পারিত কিংবা সম্মতি নিয়া তাহাকে পুনর্বিবাহ করিতে পারিত। কিন্তু সে যদি স্থায়ী বিচ্ছেদ ও অখণ্ডণীয় তালাকই চায়, তাহা হইলে স্ত্রীকে দাম্পত্যবন্ধন হইতে পুরাপুরি মুক্তি দিতে হইবে। এই কথাই ‘সদয়ভাবে বিদায় দিতে হইবে’ বাক্যটিতে বলা হইয়াছে, যাহার অর্থ হইল তৃতীয়বার তালাক উচ্চারণ করিয়া মুক্তি দাও (জরীর ও মুসনাদ) পরবর্তী আয়াতে ইহা আরও পরিষ্কার হইয়া উঠিয়াছে। অতএব, এখানে ‘তসরীহ্’ শব্দের দ্বারা ‘তালাক’ বুঝাইয়াছে।