২৫৫

এই একই আয়াতে, দুইটি স্থলে অনৈক্যের কথা বলা হইয়াছে। এই দুইটি অনৈক্য দুই ধরণের। নবী আসার পূর্বে তাহাদের মধ্যে প্রতিমা-পূজা ও ব্রত পালন ইত্যাদি নিয়া বিভিন্নতা ছিল। কিন্তু নবী আসার পরে, নবীর দাবী নিয়া তাহাদের মধ্যে অনৈক্য দেখা দিল। নবী তাহাদের মধ্যে অনৈক্যের সৃষ্টি করেন না, কেননা অনৈক্যতো তাহাদের মধ্যে পূর্বেই ছিল, নবী আসাতে সেই অনৈক্যের রং ও রূপ বদলাইয়াছে মাত্র। নবী আসার পূর্বে তাহাদের মধ্যে পারস্পরিক বিবাদ-বিসংবাদ ও বিভেদ থাকা সত্ত্বেও তাহারা এক জাতি বলিয়া মনে হয়। আর, নবী আসার পরে এই বিভেদ রং বদলাইয়া, বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী, এই দুই দলে বিভক্ত হয়। সার্বিকভাবে দেখিলে এই আয়াতটি মানবেতিহাসের পাঁচটি বিভিন্ন স্তরের কথা বর্ণনা করিতেছে। প্রাথমিক অবস্থায় মানব-গোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্য ছিল, সকলেই ছিল এক সম্প্রদায়ের। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও স্বার্থের ব্যাপকতা বিস্তৃতির মধ্য দিয়া, সামাজিক জটিলতা ও সমস্যাদি সৃষ্টি হইলে তাহারা সুসংবদ্ধ থাকিতে পারিল না এবং বিভিন্নতা দেখা দিতে লাগিল। তখন আল্লাহ্ তাহাদের মধ্যে নবী প্রেরণ করিয়া, তাঁহার ইচ্ছা ও নিয়ম মানবকে জানাইতে লাগিলেন। কিন্তু যে জাতির জন্য ঐশী বাণী প্রেরণ করা হইল, তাহারা ঐ বাণীকে এবং ঐ বাণীবাহককে কেন্দ্র করিয়া কলহ ও বিচ্ছেদে লিপ্ত হইল। প্রত্যেক বাণী ও বাণী-বাহকের অবতরণের ক্ষেত্রেই এইরূপ ঘটিয়াছে। অবশেষে আল্লাহ্‌তা’লা তাঁহার সর্বশেষ ধর্মগ্রন্থ ও সার্বজনীন বাণীসহ বিশ্বনবীকে প্রেরণ করিলেন, যিনি আসিয়া বিশ্বের সকল মানবকে তাঁহার ধর্মীয় পতাকাতলে সমবেত হইবার উদাত্ত আহবান জানাইলেন। এইভাবে একটি বৃত্ত, যাহা একত্বের বিন্দু হইতে আরম্ভ হইয়াছিল, উহা যেন ঘুরিয়া সেই একত্বের বিন্দুতেই মিলিত হইয়া, রক্তের চক্র ও পরিধিকে পূর্ণ করে। ইহাই আল্লাহ্‌র পরিকল্পনা ও ইচ্ছা।