১৩২

ভ্রমবশতঃ এই আয়াত হইতে এইরূপ ধারণার উদ্ভব হইয়াছে যে, কুরআনের কিছু আয়াত বাতিল করা হইয়াছে। এইরূপ সিদ্ধান্তে পৌছা খুবই মারাত্মক ও ভ্রমাত্মক। এই আয়াতে এমন কোন ইঙ্গিতও নাই যে আয়াত বলিতে কুরআনের আয়াতকে বুঝাইয়াছে। পূর্বাপর বাক্যগুলি পাঠ করিলে ইহাই দেখা যায় যে, এখানে পূর্ববর্তী কিতাবধারী ইহুদীদের কথাই বলা হইতেছে এবং নূতনভাবে অবতীর্ণ আল্লাহ্‌র বাণীর প্রতি তাহাদের হিংসা-বিদ্বেষের কথা বলা হইতেছে। ইহা হইতে এই কথা স্পষ্ট বুঝা যায়, বাতিলকৃত আয়াত বলিতে পূর্ববর্তী কিতাবের আয়াত বুঝাইতেছে। পূর্ববতী ধর্মগ্রন্থগুলিতে দুই রকমের আদেশনির্দেশ পাওয়া যায়ঃ (১) ঐ সব নির্দেশ, যাহা সময় ও অবস্থার পরিবর্তনের কারণে এবং নূতন বিশ্বজনীন নির্দেশাবলীর অবতরণের ফলে অপ্রয়োজনীয় হইয়া পড়িয়াছে; এইগুলি বাতিল যোগ্য। (২) ঐ সব আদেশ, যেগুলিতে চিরসত্য বিদ্যমান রহিয়াছে; সেগুলির পুনর্বর্ণনা ও পুনরুজ্জীবন প্রয়োজন যাহাতে মানুষ ঐ হারানো সত্যকে ফিরিয়া পায়। অতএব, ইহার প্রয়োজন ছিল যে পূর্ববর্তী কিতাবের কিছু অংশ বাতিল হইয়া নূতন কিছু সময়োপযোগী শিক্ষা উহার স্থান লাভ করে এবং ভুলিয়া যাওয়া চিরসত্যগুলি পুনরুজ্জীবিত হয়। অতএব, আল্লাহ্‌তা’লা তাহাই করিয়াছেন। তিনি পূর্ববর্তী কিতাবের কতকাংশ অপ্রয়োজনীয় বিধায় বাতিল করিয়া তদস্থলে নূতন ও উন্নতমানের বাণী পাঠাইয়াছেন এবং সঙ্গে সঙ্গে হারানো অংশগুলিকে, অনুরূপ নূতন বাণী দ্বারা পুনরুদ্ধার করা হইয়াছে। ইহাই এই আয়াতের সত্যিকার অর্থ ও তাৎপর্য যাহা প্রসঙ্গের সহিত সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং কুরআনের সাধারণ শিক্ষামালার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। কুরআন পূর্ববর্তী সকল ধর্মগ্রন্থকে বাতিল করিয়া, তাহাদের সকলের স্থান গ্রহণ করিয়াছে। কেননা, মানবের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, কুরআন নূতন বিধান নিয়া আসিয়াছে, যাহা পূর্ববর্তী বিধানসমূহ হইতে কেবল যে উন্নত পর্যায়ের,তাহাই নহে বরং সর্বকালের সর্বমানবের জন্য ইহার কার্যকারিতা রহিয়াছে। অপূর্ণ, অপোক্ত সাময়িক শিক্ষা, যাহা সীমাবদ্ধ সময়ের জন্য নির্ধারিত ছিল, তাহা বিশ্বজনীন সর্বকালোপযোগী শিক্ষার কাছে হার মানিবে, ইহাই স্বাভাবিক। এই আয়াতে, ‘নানসাখ’ (আমরা বাতিল করি) শব্দটির সরাসরি সম্পর্ক ‘বি-খাইরিন’ (আরও উত্তম একটি) শব্দটির সাথে এবং ‘নূনসিহা’ (আমরা ভুলাইয়া দেই) শব্দটির সম্পর্ক রহিয়াছে বি-মিসলিহা (তদনুরূপ) শব্দটির সাথে। অতএব, অর্থ দাঁড়ায় এইরূপঃ— যখন আল্লাহ্‌ কোন কিছু বাতিল করেন, তখন তদস্থলে উহা হইতে উত্তম কিছু প্রবর্তন করেন। আর যখন তিনি কিছু ভুলাইয়া দেন, তখন তিনি তাহা পুনরুজ্জীবিত করেন বা তদনুরূপ কিছু প্রবর্তন করেন। ইহুদী ওলামা নিজেরাই স্বীকার করেন যে,নবুখদনিৎসর যখন ইসরাঈলীদিগকে বন্দী করিয়া ব্যাবিলনে লইয়া গিয়াছিলেন, তখন সমস্ত তওরাত গ্রন্থই হারাইয়া গিয়াছিল (এনসা বিব্‌)।