১৩০-ক

যখন ইহুদীরা দেখিতে পাইল যে, ইসলাম দৃঢ় গতিতে বিস্তার লাভ করিতেছে এবং আরবদের বিরোধিতা স্তিমিত হইয়া পড়িয়াছে, আর মনে হইতেছিল, ইসলামকে ঠেকাইবার বা প্রতিরোধ করিবার শক্তি আরবদেশে অবশিষ্ট নাই, তখন তাহারা ইসলামের বিরুদ্ধে ভিন্ন দেশগুলিকে ক্ষেপাইতে লাগিল। এই ইহুদীরা খৃষ্টান শাসকদের অত্যাচার ও নির্যাতনে স্বদেশ ত্যাগ পূর্বক পারশ্য সাম্রাজ্যে আশ্রয় নিয়াছিল এবং নিজেদের ধর্ম কেন্দ্রকে জুডা হইতে বেবিলনীয়াতে স্থানান্তরিত করিয়াছিল (হাচিনসনের হিস্ট্রী অব নেশন্স,পৃঃ ৫৫০) ক্রমে ক্রমে, তাহারা পারশ্যের রাজদরবারে প্রভাবশালী হইয়া উঠিল এবং এই সুযোগে, ইসলামের বিরুদ্ধে সেখানে ষড়যন্ত্র পাকাইতে শুরু করিল। যখন ইরানের সম্রাট দ্বিতীয় খস্‌রুর কাছে রসূলে করীম (সাঃ)-এর প্রেরিত ইসলাম গ্রহণের আহবান-পত্র পৌঁছিল, তখন ইহুদীরা তাহাকে এতই উত্তেজিত করিয়া তুলিল যে, খসরু (২) ইয়েমেনের গভর্ণর বাধানকে হুকুম দিলেন, সে যেন রসূলে করীম (সাঃ)-কে গ্রেফতার করিয়া শিকল-বাঁধা অবস্থায় পারশ্যের রাজ দরবারে পাঠাইয়া দেয়। এই আয়াতটিতে মহানবী (সাঃ)-এর সময়কার ইহুদীদের এইসব ষড়যন্ত্র ও দুষ্কৃতির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হইয়াছে। তাহাদিগকে বলা হইতেছে যে, তাহাদের পূর্ব পুরুষেরা সুলায়মান (আঃ)-এর বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র করিয়াছিল এবং তাঁহার বিরুদ্ধে গোপন দল গঠন পূর্বক গোপন চিহ্নাবলীর ব্যবহার শিখাইয়াছিল (১ – রাজাবলী – ১১ঃ২৯ – ৩২, ১ – রাজাবলী – ১১ঃ১৪, ২৩, ২৬; ২ – বংশাবলী – ১০ঃ ২ – ৪)। দ্বিতীয় বারের মত তাহারা অনুরূপ গোপন সংস্থা গঠন করিয়াছিল রাজা নবূখদনিৎসরের সময়ে, যখন ইহুদীরা ব্যাবিলনে বন্দী অবস্থায় ছিল।

যে দুইজন পবিত্র পুরুষের কথা এই আয়াতে বলা হইয়াছে, তাহাদের একজন হইলেন হাগ্‌গাই নবী এবং অপরজন ইদ্দোর পুত্র যাকারিয়্যা (ইষ্রা ৫ঃ১)। এই পবিত্র পুরুষ দুইজন তাঁহাদের সমাজে কেবল পুরুষদিগকে গ্রহণ করিতেন এবং নব-দীক্ষিত সভ্যগণকে বলিয়া দিতেন যে, তাহারা আল্লাহ্‌র তরফ হইতে এক ধরণের পরীক্ষা স্বরূপ আসিয়াছেন এবং আরও বুঝইয়া দিতেন যে, ইসরাঈলীরা তাহাদের কথায় যেন অবিশ্বাস না করে। যখন মিডিয়া-পারশ্যের বাদশাহ্ সাইরাস ক্ষমতায় আসিলেন, তখন ইসরাঈলীরা তাহার সহিত এক গোপন চুক্তিতে আবদ্ধ হইল। ইহার ফলে সাইরাসের ব্যাবিলন বিজয় সহজ ও ত্বরান্বিত হইল। এই সাহায্যের জন্য, সাইরাস ইসরাঈলীদের প্রতি অনুরক্ত হইয়া তাহাদিগকে জেরুজালেমে ফিরিবার অনুমতি ত দিলেনই, তদুপরি সুলায়মানের ধর্মশালা পূনঃনির্মাণেও তাহাদিগকে সাহায্য প্রদান করিলেন (হিষ্টেরিয়ান’স হিস্ট্রী অব দি ওয়ার্ল্ড, ২য়, ১২৬)। এই আয়াত ইঙ্গিত করিতেছে যে, ইহুদীদের পূর্বেকার দুইটি প্রচেষ্টার দুই রকম ফল হইয়াছিল। প্রথমবার সুলায়মান (আঃ)-এর বিরুদ্ধে তাহারা যে ষড়যন্ত্র পাকাইয়াছিল, তাহাতে তাহারা নিজেদের সম্মান-প্রতিপত্তি তো হারাইলই, পরন্ত শেষ পর্যন্ত ব্যাবিলনে নির্বাসিত হইল। দ্বিতীয়বার, তাহারা দুইজন পবিত্র লোকের সাহায্যে একই ধরণের কর্মপন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে কৃতকার্য হইয়াছিল। তাই, ইস্‌রাঈলীদের এই তৃতীয়বারের ষড়যন্ত্র যাহা তাহারা মহানবী (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে পাকাইতেছে তাহা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হইবে (যেমন সুলায়মান (আঃ)-এর সময় হইয়াছিল, কিম্বা সাফল্যমণ্ডিত হইবে, যেমন ব্যাবিলনে হইয়াছিল, সেই বিষয়ে আলোকপাত করিতে গিয়া কুরআন বলিতেছে, ‘মহানবী (সাঃ)-এর শত্রুরা এখন বুঝিতে পারিতেছে যে, ইহা তাহাদের ক্ষতি করিবে, ভাল করিবে না।’ অর্থাৎ হযরত (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে তাহাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ ও বিফল হইবে।