এই আয়াতের প্রথম বাক্যাংশ দুইটি দ্বারা বুঝা যায়, শয়তান জাতীয় কোনও সত্তা আদম ও তাহার সঙ্গিনীকে ভুলাইয়া, প্রতারণাপূর্বক তাহাদের নির্ধারিত স্থান হইতে সরাইয়া নিয়াছিল এবং তাহাদের আরামের অবস্থা হইতে বঞ্চিত করিয়াছিল। ২ঃ৩৫ আয়াতের ব্যাখ্যায় দেখানো হইয়াছে, যে সত্তা প্রবঞ্চনার মাধ্যমে আদমকে কষ্টে নিপতিত করিয়াছিল সে শয়তান, ইব্লীস নহে। পরন্তু ইব্লীস সেই বিদ্রোহী সত্তা যে আদমের আনুগত্য করিতে বা সহযোগিতা করিতে অস্বীকার করিয়াছে। কাজেই এখানে শয়তান বলিতে ইব্লীসকে বুঝায় নাই, আদমের সময়ের অন্য কাহাকেও বুঝাইয়াছে, যে আদমের শত্রু ছিল। এই কথার আরও সমর্থন ১৭ঃ৬৬-তে পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যায়, ইব্লীস আদমের কোন ক্ষতি সাধন করিতে পারিবে না। অথচ শয়তান কিছু ক্ষতি সাধন করিয়াছে। ‘শয়তান’ শব্দটি ‘ইব্লীস’ শব্দ হইতে বহু ব্যাপকতর অর্থ বহন করে। আদমকে আনুগত্য করিতে অস্বীকারকারী জিন্নের অন্তর্ভুক্ত দুরাচারীকে বলা হইয়াছে ইব্লীস, যে অশুভ শক্তির প্রতিনিধিত্বকারী নেতা। অন্যদিকে যে কোনও মন্দ ও ক্ষতিকর বস্তু বা জীব-জন্তু, মানব বা মানবাত্মা, রোগ-শোক বা অন্য সব কিছুকেই ‘শয়তান’ বলা যায়। অতএব ইব্লীস ও ইব্লীসের সঙ্গী সাথীরাও শয়তান, সত্যের শত্রুরাও শয়তান, দুষ্ট ও দুষ্কৃতকারী মানুষেরাও শয়তান, ক্ষতিকর জন্তুও শয়তান, মারাত্মক ব্যাধিসমূহও শয়তান। কুরআন, হাদীস ও আরবী সাহিত্যে এমন ভূরি ভূরি দৃষ্টান্তে পরিপূর্ণ রহিয়াছে যেখানে শয়তান শব্দটি স্বাধীনভাবে এই সব বস্তুর যে কোন একটি বা সবটির জন্যই ব্যবহৃত হইয়াছে।