‘আসমা’ শব্দটি ‘ইসম’ এর বহুবচন, যাহার অর্থ নাম বা গুণ। একটি বস্তুর চিহ্ন বা দাগ (লেইন, মুফরাদাত)। ‘আসমা’ শব্দটি এখানে কি অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে, তাহা নিয়া কুরআনের ব্যাখ্যাকারকদের মধ্যে মতভেদ রহিয়াছে। অনেকে মনে করেন আল্লাহ্ আদমকে বস্তু সমূহের ও গুণাগুণের নাম শিখাইয়া ছিলেন অর্থাৎ ভাষাজ্ঞান শিখাইয়াছিলেন। ইহাতে কোনও সন্দেহ নাই যে, সভ্যতা অর্জন করিতে হইলে, ভাষার প্রয়োজন। ভাষা ছাড়া মানুষ সভ্য হইতে পারে না। আল্লাহ্ নিশ্চয় আদমকে ভাষার রীতি-নীতি শিখাইয়াছিলেন। কিন্তু নৈতিক গুণাবলী লাভের জন্য আরো কিছু আস্মা (নাম ও গুণ) মানুষের শিখা দরকার। ঐ সব ‘আসমার’ কথা কুরআনে (৭ঃ১৮১) আছে। আল্লাহ্তা’লার গুণাবলীর সঠিক ও স্পষ্ট ধারণা ও জ্ঞান না থাকিলে মানুষ ঐশী আলোকে আলোকিত হইতে পারে না। কাজেই ইহা প্রয়োজন ছিল যে, আল্লাহ্তা’লা প্রথমেই আপন গুণাবলীর সহিত আদমকে পরিচিত করাইয়া দেন, যাহাতে তাহার পক্ষে আল্লাহ্র স্বরূপ বুঝিতে এবং তাঁহার নৈকট্য লাভ করিতে অসুবিধা না হয়। অন্যথায়, ইহা সম্ভব ছিল যে, তিনি আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ হইতে বঞ্চিত হইয়া দূরে সরিয়া পড়িতেন। কুরআনের বর্ণনা অনুসারে মানুষ ও ফিরিশ্তার মাঝে পার্থক্য এই যে, মানুষ আল্লাহ্র গুণাবলীর (আসমাউল হুসনার) প্রতিচ্ছবি হইতে পারে, কিন্তু ফিরিশ্তার মধ্যে আল্লাহ্র অল্প কয়েকটি গুণ মাত্র প্রতিফলিত হয়। ফিরিশ্তার নিজস্ব ইচ্ছা বলিতে কিছুই নাই। তাহারা আল্লাহ্ প্রদত্ত কর্তব্যগুলি যান্ত্রিক ভাবে সম্পাদন করিয়া থাকেন(৬৬ঃ৭)। অন্যদিকে মানুষকে স্বকীয় ইচ্ছায় স্বাধীনভাবে কাজ করিবার শক্তি প্রদান করা হইয়াছে যাহার কারণে সে নিজের বুদ্ধি-বিবেচনা ও সদিচ্ছা খাটাইয়া আপন কর্ম শক্তিকে কাজে লাগাইয়া সৃষ্টিকর্তার গুণাবলীর প্রকাশস্থল হইতে পারে।
সংক্ষেপে, এই আয়াতের তাৎপর্য ইহাই যে, আল্লাহ্ প্রথমে আদমের মধ্যে স্বাধীন ইচ্ছা উপ্ত করিলেন, তাহাকে আল্লাহ্র গুণাবলী বুঝিবার ও জানিবার প্রয়োজনীয় শক্তি সামর্থ্য প্রদান করিলেন এবং তৎপর ঐসব গুণাবলীর জ্ঞান দান করিলেন। ‘আসমা’ বলিতে, বিভিন্ন জিনিসের মধ্যে যে সব অন্তর্নিহিত গুণাবলী রহিয়াছে তাহাও বুঝায়। যেহেতু, মানুষকে প্রাকৃতিক শক্তি সমূহের ব্যবহার দ্বারা বাঁচিতে ও উন্নতি করিতে হইবে, সেই জন্য আল্লাহ্ মানুষকে প্রাকৃতিক শক্তি ও বস্তুসমূহের অন্তর্নিহিত ও বাহ্যিক গুণাবলীর জ্ঞান লাভের ক্ষমতা প্রদান করিয়াছেন।