“আইয়াম” বহুবচন, একবচনে “ইয়াওম” অর্থ—চিরকালীন সময় (১৪৪); অথবা ইহার দ্বারা কোন জিনিষের পরিবর্ধন বা পরিণতির অনির্দিষ্ট সময়ের পর্যায়ক্রমিক স্তর বুঝায়। এই সময়ের দৈর্ঘ,ব্যাপ্তি বা স্থায়ীত্বের পরিমাণ আন্দাজ করা বা সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব নহে। ইহা হইতে পারে “এক হাজার বৎসর” (২২ঃ৪৮), অথবা “পঞ্চাশ হাজার বৎসর” (৭০ঃ৫)। কিন্তু “ইয়াওম” শব্দ এখানে অথবা কুরআনের অন্য কোন আয়াতে নিশ্চিতরূপেই ২৪ ঘন্টার সময়ের পরিধি বুঝায় না, যাহা পৃথিবীর কাল্পনিক অক্ষরেখা বা মেরুরেখার উপর আবর্তনের হিসাবে স্থিরীকৃত। আল্লাহ্তা’লা তাঁহার দিনসমূহের সীমা, আয়তন, বিস্তার, ব্যাপ্তি এবং সীমারেখা আমাদের নিকট প্রকাশ করেন নাই। আল্লাহ্তা’লার দিনসমূহের মধ্যে কতক যদি হাজার বছর ব্যাপীয়া দীর্ঘ হয় এবং অন্য কতক পঞ্চাশ হাজার বছর ব্যাপীয়া বিস্তৃত হয়, তাহা হইলে তাঁহার অন্যান্য দিন এমনও হইতে পারে যাহা লক্ষ লক্ষ বা কোটি কোটি বছরব্যাপীয়া বিস্তৃত। বিজ্ঞান এই তত্ত্ব আবিস্কার করিয়াছে যে, আকাশ এবং পৃথিবী বর্তমান আকারে বিবর্তিত হইতে লক্ষ লক্ষ বৎসর সময় লাগিয়াছে। বিখ্যাত মুসলিম মনীষী হযরত মুহীউদ্দীন-ইবনে-আরাবী (রঃ)-এর এক কাশফ (দিব্যদর্শন) যে কোন অনুসুন্ধিৎসু ব্যক্তিকে উপরোক্ত অভিন্ন সিদ্ধান্তেই উপনীত করে। এমতাবস্থায় আমরা অবশ্যই “ছয় দিবস”-এর দৈর্ঘ বা সীমারেখা স্থির করিতে পারি না, যে সময় বা কালের মধ্যে এই পৃথিবী এবং আকাশমণ্ডলের সৃষ্টি পূর্ণ হইয়াছিল। আল্লাহ্তা’লা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটাইয়া থাকেন, কোন পরিবর্তনে হাজার বছর লাগিয়া যায়, কোনটিতে পঞ্চাশ হাজার বছর, আবার অন্য কতকগুলিতে উহা হইতেও দীর্ঘতর সময় লাগে। আমরা কেবল ইহাই বলিতে পারি যে, পৃথিবী এবং আকাশমণ্ডলের পরিপূর্ণ ও ত্রুটীহীন রূপ পরিগ্রহ করার জন্য ছয়টি অতি সুদীর্ঘ আবর্তনশীল কালক্রম লাগিয়াছিল।