৭৭-৭৯ আয়াত প্রকাশ করে যে, হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তাঁহার (প্রতিমা-পূজারী) জাতিকে তাহাদের অদ্ভুত হাস্যকর বিশ্বাস সম্পর্কে ভালভাবে উপলব্ধি করাইবার জন্য এক যুক্তি প্রয়োগ করিয়াছিলেন। তাহা হইল, তাহাদের তো চন্দ্র, সূর্য এবং গ্রহ-নক্ষত্র প্রভৃতি অনেক খোদা আছে, যাহাদের উপাসনা তাহারা করে (যিউ এনসাই)। এই আয়াতগুলি হইতে ইহা অনুমান করা ভুল হইবে যে, হযরত ইব্রাহীম (আঃ) নিজেই অন্ধকারে পথ হাতড়াইতেছিলেন এবং তিনি জানিতেন না যে, কে তাঁহার প্রভু ছিলেন, এবং একের পর এক সন্ধ্যার নক্ষত্র, চন্দ্র এবং তারপর সূর্যকে আপন প্রভু মনে করিলেন এবং একে একে যখন সব অস্তমিত হইয়া গেল তখন তিনি উহাদের ঈশ্বরত্বে বিশ্বাস ত্যাগ করিলেন, এবং এক আল্লাহ্ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টিকর্তার দিকে প্রত্যাবর্তন করিলেন। প্রকৃত পক্ষে, বহু যুক্তি-সম্বলিত এই ঘটনা প্রমাণ করিতেছে যে, হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আকাশের এই সকল বস্তুকে প্রভুরূপে গ্রহণ করা তো দূরের কথা, বরং তিনি তাঁহার জাতির লোকদিগের বিশ্বাসের অসারতাই ধাপে ধাপে তাহাদিগকে দেখাইয়া দিতে চাহিয়াছিলেন। ৭৫-৭৬ আয়াত প্রকাশ করে যে, হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহ্তা’লার একত্বে অটল বিশ্বাসী ছিলেন। কাজেই, তিনি অন্ধকারে ঘুরপাক খাওয়ার মত এবং এক প্রতিমা হইতে অন্য প্রতিমার দিকে উদ্দেশ্যহীনভাবে চলার মত বিবেচিত হইতে পারেন না। “ইহা আমার প্রভু (হইতে পারে)?” এই শব্দগুচ্ছ নক্ষত্র পূজার বিরুদ্ধে যুক্তি প্রদর্শন করিয়াছিল। এই কথাগুলি দ্বারা তিনি তাঁহার জাতির লোকের বিশ্বাস মতে নক্ষত্র যে তাহাদের প্রভু ছিল তৎপ্রতি তাহাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়া ছিলেন। তদুপরি তিনি তো পূর্বেই জানিতেন যে, সূর্য অস্ত যাইবেই। এমতাবস্থায় তাঁহার যুক্তির মধ্যে “আমি অস্তগামীদিগকে ভালবাসি না” কথাগুলি তো পূর্বাহ্নেই তাঁহার অন্তরে ছিল। প্রকৃত প্রস্তাবে তিনি অত্যন্ত কার্যকররূপে তাঁহার যুক্তির অবতারণা করিতে চাহিয়াছিলেন। এইরূপে, প্রথমে নক্ষত্রকে তাঁহার প্রভু বলিয়া সাময়িকভাবে বাহানা করিয়াছিলেন এবং যখন উহা অদৃশ্য হইয়া গেল, তাহাদিগকে সঠিক বিষয় উপলব্ধি করাইবার জন্য অনতিবিলম্বে তৎক্ষণাৎ ঘোষণা করিলেন ‘আমি অস্তগামীদিগকে ভালবাসি না’। একই ব্যাপার ঘটিয়াছিল চন্দ্র এবং সূর্য অদৃশ্য হওয়াতে। সূর্য সম্পর্কে তিনি “বৃহত্তর” বা “বৃহত্তম” শব্দ ব্যবহার করিয়াছেন বিদ্রূপাত্মক সুরে- তাঁহার জাতিকে তাহাদের বোকামির জন্য উপহাস করার উদ্দেশ্যে। ইহাতে স্পষ্টই বুঝা যায় যে, যুক্তির যে ধারা তিনি গ্রহণ করিয়াছিলেন, উহা দ্বারা ইব্রাহীম (আঃ) তাঁহার জাতিকে ক্রমশঃ আল্লাহ্তা’লার দিকে আকর্ষণ করিতে চাহিতেছিলেন। ৮০-৮২ আয়াতের উপরে ভাসা ভাসা ভাবে দেখিলেও ইহা স্ফটিকের মত সুস্পষ্ট হইয়া যায় যে, হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহ্তা’লার উপর কেবল অটল ঈমানই রাখিতেন না, পরন্ত ঐশী-সিফত্ (গুণাবলী) সম্বন্ধেও গভীর জ্ঞান-সম্পন্ন ছিলেন।