৮৬৪

বাইবেলের পুরাতন নিয়ম গ্রন্থে হযরত ইব্‌রাহীমের পিতার নাম তেরহ্‌ দেওয়া হইয়াছে (আদিপুস্তক-১১ঃ২৬) এবং নূতন নিয়মেও তেরহ্‌ লিখিত হইয়াছে (লুক-৩ঃ৩৪)। তালমূদ লুকের সাথে একমত। গির্জা বা যাজক সংক্রান্ত ইতিহাসের প্রবর্তক, ইউসিবিয়াস (Eusebius) ইব্‌রাহীমের পিতার নাম আথার (Athar) বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন (Sale)। ইহাতে প্রতীয়মান হয় যে, ইহুদীদের মধ্যেও ইব্‌রাহীমের পিতার নাম সম্বন্ধে মতভেদ ছিল। আদি-পুস্তক এবং লুক-এর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করার কোন জোরালো কারণ ইউসিবিয়াসের অবশ্যই ছিল। আথার (Athar)ই সঠিক বলিয়া মনে হয় যাহা পরবর্তী কালে তেরহ্‌ বা থারাতে রূপান্তরিত হইয়া যায়। “আথার” কুরআনে উল্লেখিত নামের (আয্‌র) প্রায় সমরূপ, উচ্চারণে সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া শব্দ দুইটির আকার প্রায় একই। অতএব, খৃষ্টান লেখকগণের কুরআন করীমের সঙ্গে বিতণ্ডা করার কোন কারণ থাকিতে পারে না। এই কারণে যে, ইহার মধ্যে ইব্‌রাহীমের পিতাকে ‘আয্‌র’ নামে অভিহিত করা হইয়াছে। তাহাছাড়া, তালমূদ কিতাবে ইব্‌রাহীমের পিতার নাম ‘তেরহ্‌’ রাখা হইয়াছে (Sale), এবং ‘যারাহ’ শব্দটি ‘আযর’ এর প্রায় কাছাকাছি। ইহাতে প্রতিপন্ন হয় যে, কুরআনের বিবরণ অধিক নির্ভরযোগ্য। তদুপরি আযরকে কুরআনে হযরত ইব্‌রাহীম (আঃ)-এর আব্‌ (২৬ঃ৮৭) বলা হইয়াছে। ‘আব’ শব্দ পিতা, চাচা বা পিতামহ প্রভৃতির জন্য প্রয়োগ হইয়া থাকে। ২ঃ১৩৩ আয়াতে হযরত ইয়াকুব (আঃ)-এর চাচা হযরত ইসমাঈল (আঃ)-কে তাঁহার ‘আব্‌’ বলিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে। যাহা হউক, কুরআন হইতে ইহা প্রতীয়মান হয় যে, আয্‌রকে যদিও ইব্‌রাহীমের “আব্‌” বলা হইয়াছে, সম্ভবতঃ তিনি তাঁহার পিতা ছিলেন না। হযরত ইব্‌রাহীম (আঃ) তাঁহার ‘আব্‌’ আয্‌র-এর নিকট ওয়াদা করিয়াছিলেন যে, তিনি আল্লাহ্‌তা’লার নিকট তাহার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করিবেন। কিন্তু যখন তিনি আল্লাহ্‌তা’লার নিকট জানতে পারিলেন যে, ‘আয্‌র’ আল্লাহ্‌তা’লার শত্রু তখন হযরত ইব্‌রাহীম (আঃ) তাহার জন্য দোয়া করা হইতে বিরত রহিলেন, এমনকি, প্রকৃত পক্ষে দোয়া করিতে তাঁহাকে বারণ করা হইয়াছিল (৯ঃ১১৪)। কিন্তু ১৪ঃ৪২ আয়াতে ইব্‌রাহীম (আঃ) তাঁহার ওয়ালিদ-এর জন্য দোয়া করিয়াছিলেন, ‘ওয়ালিদ’ শব্দ পিতার জন্যই প্রয়োগ হয়। ইহাতে প্রমাণিত হয় যে, ‘আযর’ যাহাকে ইব্‌রাহীমের ‘আব্‌’ বলা হইয়াছে তিনি তাঁহার ‘ওয়ালিদ’ অর্থাৎ পিতা হইতে ভিন্ন ব্যক্তি ছিলেন। খুব সম্ভবতঃ তিনি তাঁহার চাচা ছিলেন। বাইবেলের কোন কোন অংশও এই অনুমান সমর্থন করে। তেরহ্‌-এর কন্যা ‘সারাহ্‌’কে ইব্‌রাহীম বিবাহ করিয়াছিলেন (আদি পুস্তক-২০ঃ১২)। ইহাতেও প্রতিপন্ন হয় যে, তেরহ্‌ তাঁহার পিতা ছিলেন না, কারণ তিনি তাঁহার ভগ্নীকে বিবাহ করিতে পারেন না। বোধ হয় তাঁহার পিতার মৃত্যু হওয়ায় তাঁহার চাচা আয্‌র বা আথার তাঁহাকে লালন পালন করিয়াছিলেন, এবং তাহার কন্যা সারাহ্‌কে তাঁহার সঙ্গে বিবাহ দিয়াছিলেন। যেহেতু আয্‌র ইব্‌রাহীমকে লালন-পালন করিয়াছিলেন এবং তাঁহার পিতৃতুল্য ছিলেন, সেই কারণে তাঁহাকে পুত্র বলিতেন এবং এই জন্য আয্‌র বা আথারকে ইব্‌রাহীমের প্রকৃত পিতা বলিয়া ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি হইয়াছিল। তালমূদ কিতাব হইতে ইহাও প্রতিপন্ন হয় যে, আয্‌র প্রতিমাগুলি ভাঙ্গার অপরাধে ইব্‌রাহীমকে অভিযুক্ত করিয়াছিল এবং বিচারের জন্য রাজার নিকট নিয়ছিল। যদি আয্‌র ইব্‌রাহীমের পিতা হইতেন তাহা হইলে নিজ পুত্রের বিরুদ্ধে হয়ত এমন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিতেন না।