৮৫

‘শাফায়াতুন’ শব্দটি ‘শাফায়া’ হইতে উদ্ভূত, যাহার অর্থ একক একটি বস্তুর সহিত সমজাতীয় আরেকটি বস্তুর সংযোগ সাধন করা, একটি জিনিসের সহিত সমজাতীয় জিনিস সংযুক্ত করা (মুফরাদাত)। শব্দটি সাদৃশ্যের ও সমমনা হওয়ার তাৎপর্য রাখে। মধ্যস্থতা করা বা অন্যের প্রতি ক্ষমা ও অনুগ্রহ প্রদর্শনের জন্য উচ্চতম কর্তৃপক্ষের কাছে প্রার্থনা ও সুপারিশ করাকেও শাফায়াত বলা হয়। এইরূপ ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী বা সুপারিশকারী ব্যক্তি ক্ষমাকাঙ্খী ব্যক্তি হইতে বহু উচ্চ মর্যদার হইয়া থাকেন এবং ক্ষমাকারীর সহিত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত হইয়া থাকেন (মুফরদাত,লিসান)। ‘শাফায়াত’ (মধ্যস্থতা বা সুপারিশ) করার কয়েকটি শর্ত আছে (১) যিনি সুপারিশ করেন, সুপারিশ গ্রহণকারীর সহিত তাহার সুগভীর সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন—কেননা, সম্পর্কের প্রগাঢ় গভীরতা না থাকিলে কিংবা নৈকট্যের বৈশিষ্ট্য না থাকিলে, সুপারিশ করা যায় না এবং সুপারিশে কোন ফল হয় না; (২) যাহার জন্য সুপারিশ করা হয়, সুপারিশকারীর সাথে তাহার সত্যিকার ভালবাসা ও ভক্তির সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন, কেননা পারস্পরিক সম্পর্ক না থাকিলে, কে কাহার জন্য সুপারিশ করে; (৩) যাহার জন্য সুপারিশ করা হয়, তাহাকে নিশ্চয় একজন ভাল মানুষ হইতে হইবে (২১ঃ২৯), যিনি আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভে চেষ্টারত থাকা সত্বেও সাময়িক দুর্বলতার কারণে পাপে পতিত হইয়াছেন; (8) আল্লাহ্‌র প্রকাশ্য অনুমতি প্রাপ্তির পরেই কেবল সুপারিশ করা যাইতে পারে, নতুবা নয় (২ঃ২৫৬, ১০ঃ৪)। ইসলামে শাফায়াতের যে ধারণা আছে, তাহা ‘তওবা’ (অনুতাপ)-এর নামান্তর। তওবা (অনুতাপ)-এর তাৎপর্য হইল ছিন্ন-সম্পর্কের পুনঃস্থাপন কিংবা শিথিল ও ঢিলা সম্পর্কের দৃঢ় করণ। তাই, যখন মৃত্যুর সাথে সাথে তওবার দরজা বন্ধ হইয়া যায়, তখনও শাফায়াতের দরজা খোলা থাকে। তদুপরি, শাফায়াত দ্বারা আল্লাহ্‌তা’লার রহমতের প্রকাশ ঘটে। যেহেতু, আল্লাহ্ কেবলমাত্র বিচারকই নহেন, বরং মালিকও বটেন, অতএব, যাহাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করিবার পূর্ণ কর্তৃত্বও তিনি রাখেন।