‘শাজারাহ’ মানে গাছ। বাইবেলের মতে এই গাছটি ছিল জ্ঞান-বৃক্ষ যাহার ফল ভক্ষণে ভাল-মন্দের জ্ঞান লাভ ঘটে। কিন্তু কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী দেখা যায় যে, ঐ নিষিদ্ধ গাছের ফল ভক্ষণের ফলশ্রুতিতে আদম ও হাওয়া উলঙ্গ হইয়া গেলেন। ইহাতে বুঝা যায়, ইহা মোটেই জ্ঞান-বৃক্ষ ছিল না, বরং কুফল সৃষ্টিকারী কোন বৃক্ষ ছিল, যাহার কারণে আদমের মধ্যে দুর্বলতার প্রকাশ ঘটিল। কুরআনের অভিমতই সত্য। কেননা, মানবকে জ্ঞান হইতে বঞ্চিত করা, মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্যকেই নস্যাৎ করিয়া দেয়। একটি বিষয়ে অবশ্য কুরআন ও বাইবেল মতৈক্য পোষণ করে বলিয়া মনে হয়, তাহা এই যে, গাছটি সত্যিই আক্ষরিক অর্থে বৃক্ষ ছিল না, বরং একটি প্রতীক ছিল মাত্র। কারণ, পৃথিবীর বুকে এমন কোন গাছ ছিল বা আছে বলিয়া জানা নাই, যাহার ফল-ভক্ষণে মানুষ ভাল ও মন্দের জ্ঞান প্রাপ্ত হয় অথবা নগ্ন হইয়া যায়। অতএব, এই বৃক্ষটি অন্য কোন কিছুর প্রতিনিধিত্বকারী প্রতীক বৈ অন্য কিছু নহে। ‘শাজারা’ অর্থ ‘ঝগড়া-বিবাদ’ও হয়। কুরআনের অন্যত্র দুই প্রকারের ‘শাজারার’ উল্লেখ আছেঃ (১) শাজারাহ্ তৈয়্যবা (ভাল গাছ) এবং (২) শাজারাহ্ খবিস (মন্দ গাছ) (১৪ঃ২৫,২৭)। পবিত্র বস্তু, পবিত্র শিক্ষা ও পবিত্র কর্মকে ভাল গাছের সহিত এবং মন্দ বস্তু, মন্দ চিন্তা ও মন্দকর্মকে মন্দ গাছের সহিত সমতুল্য দেখানো হইয়াছে। এই ব্যাখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে আয়াতটির অর্থ দাঁড়াইবে (১) আদমকে ঝগড়া-বিবাদ পরিহার করিয়া চলিবার নির্দেশ দেওয়া হইয়াছিল, (২) বিবিধ প্রকার অনিষ্টকারী বিষয় হইতে বাচিয়া থাকার জন্য তাহাকে সাবধান করিয়া দেওয়া হইয়াছিল।