অন্যান্য বৈশিষ্ট্য ছাড়াও, ইসলামের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য এই যে, ইহা পরামর্শ গ্রহণ বা ‘মুশাওয়ারা’ কে একটি মৌলিক নীতি হিসাবে অঙ্গীভূত করিয়াছে। রাষ্ট্র প্রধানের জন্য, রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যাপারে, মুসলমানদের সঙ্গে পরামর্শ করা বাধ্যকর করা হইয়াছে। মহানবী (সাঃ) সকল বড় বড় ব্যাপারেই তাঁহার অনুসারীদের পরামর্শ নিতেন। বদরের যুদ্ধের পূর্বেও তিনি পরামর্শ করিয়াছেন, তেমনি করিয়াছেন উহুদ ও আহযাবের যুদ্ধের পূর্বে। এমনকি তাঁহার মহিমান্বিতা স্ত্রী আয়েশা (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনার ব্যাপারেও তিনি যোগ্য ব্যক্তিগণের সাথে পরামর্শ করিয়াছিলেন। হযরত আবু হুরায়রা বলেন, ‘রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) সকল গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে যোগ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করিবার জন্য উদগ্রীব থাকিতেন’ (মনসুর, ২য়, ৯০)। দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর বলিয়াছেন, “পরামর্শ ছাড়া খেলাফত থাকিতে ও চলিতে পারে না” (ইযালাতুল খীফা আন খিলাফাতুল খুলাফা)। অতএব, পরামর্শ দান ও গ্রহণ, বিশেষতঃ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে পরামর্শ আহ্বান, ইসলামের একটি মৌলিক নির্দেশ, যাহা আধ্যাত্মিক ও জাগতিক নেতার পক্ষে অবশ্য কর্তব্য। খলীফা বা মুসলিম রাষ্ট্র-প্রধান অবশ্যই মুসলমান প্রতিনিধি বৃন্দের পরামর্শ আহ্বান করিবেন, যদিও তিনিই শেষ সিদ্ধান্তের মালিক। ইসলামী ‘শূরা’ বা ‘মুশাওয়ারা’ (পরামর্শসভা), পশ্চিমা পার্লামেন্টের মত নহে। মুসলিম রাষ্ট্রের নেতার এই অধিকার আছে যে, তিনি ইচ্ছা করিলে, পরামর্শ সভার সুপারিশ গ্রহণ না-ও করিতে পারেন। তবে, তিনি তাহার এই ইচ্ছা কদাচিৎ বিশেষ বিবেচনার সহিত প্রয়োগ করিবেন। সাধারণতঃ গ্রহণের জন্যই পরামর্শ ও সুপারিশগুলি লওয়া হইয়া থাকে।