উহুদের যুদ্ধের সময় একটি কথা রটিয়া গিয়াছিল যে, রসূলে পাক (সাঃ) মারা গিয়াছেন। এই আয়াতে সেই কথার উল্লেখ করিয়া বলা হইয়াছে যে, যদিও ঐ রটনাটা মিথ্যা ছিল, তথাপি যদি তাহা সত্য খবরই হইত, তথাপি ইহাতে প্রকৃত বিশ্বাসীদের ঈমানের মধ্যে কোনও তারতম্য ঘটার কারণ ছিল না। কেননা, মুহাম্মদ (সাঃ) তো একজন নবীই, পূর্ববর্তী অন্যান্য নবীগণ মারা গিয়াছেন, তেমনি তিনিও মারা যাইবেন, ইহাই স্বাভাবিক। তবে, ইসলামের আল্লাহ্ চিরঞ্জীব, মৃত্যুর উর্ধে। সত্য ঘটনা হিসাবে ইহা বর্ণিত রহিয়াছে যে, যখন মহানবী (সাঃ)-এর ওফাত হইল, তখন হয়রত ওমর (রাঃ) কোষ-নিষ্কাসিত অসি হস্তে মদীনার মসজিদে দাঁড়াইয়া শোকাহতগণকে বলিলেন, “যে বলিবে, আল্লাহ্র রসূল মরিয়া গিয়াছেন, আমি তাহার মস্তক ছেদন করিব। তিনি মরেন নাই, বরং তাঁহার প্রভুর কাছে গিয়াছেন, যেরূপ মূসা তাঁহার প্রভুর কাছে গিয়াছিলেন। তিনি পুনরায় আসিয়া ভণ্ডদিগকে শাস্তি দিবেন”। এমন সময় হযরত আবুবকর (রাঃ) আসিয়া উপস্থিত হইলেন এবং দৃঢ়কণ্ঠে ওমর (রাঃ)-কে বসিতে বলিলেন। অতঃপর, মসজিদে উপস্থিত মুসলিম ভ্রাতৃবৃন্দকে উদ্দেশ্য করিয়া, এই আয়াতটি (৩ঃ১৪৫) পাঠ করিলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে সাহাবীগণ হৃদয়ঙ্গম করিলেন যে, রসূলে করীম (সাঃ) আর ইহজগতে নাই, তাহারা শোকে অভিভূত হইয়া পড়িলেন (বুখারী, কিতাব ফযায়েলে আস্হাব)। ঘটনাচক্রে, এই আয়াত স্পষ্টভাবে বলিয়া দিতেছে যে, নবী করীম (সাঃ)-এর পূর্বেকার সকল নবীই ওফাত-প্রাপ্ত হইয়াছেন, কেহই বাঁচিয়া নাই – কেননা যদি কেহ জীবিত থাকিতেন, তাহা হইলে মহানবী (সাঃ)-এর মৃত্যু সাব্যস্ত করার জন্য আবু বকর (রাঃ) এই আয়াত উদ্ধৃত করিতেন না এবং সমবেত সাহাবীরাও তাহা মানিয়া লইতেন না। প্রকৃত কথা হইল এই যে, ইসলামের বাঁচিয়া থাকা আর না থাকা কোনও ব্যক্তি বিশেষের উপর নির্ভর করে না, তিনি যত বড় ও যত মহানই হউন না কেন। ইসলামের অবতীর্ণকারী, রক্ষাকারী ও অভিভাবক হইলেন স্বয়ং আল্লাহ্। এই আয়াত দ্বারা কেহ যেন এইরূপ মনে না করেন যে, মহানবী (সাঃ) যুদ্ধে নিহত হইতে পারিতেন বা কোন আততায়ীর হাতে নিহত হইতে পারিতেন। কারণ, মানুষের হস্তে নিহত হওয়া হইতে তাঁহাকে রক্ষা করা হইবে বলিয়া তিনি ঐশী প্রতিশ্রুতি পাইয়াছিলেন (৫ঃ৬৮) যখন উহুদের যুদ্ধে এই মিথ্যা কথা ছড়াইয়া পড়িল যে, নবী করীম (সাঃ) মারা গিয়াছেন, তখন শত্রুরা আনন্দে নাচিয়া উঠিল। কিন্তু মুসলমানদের জন্য ইহা ছিল দুঃখের অন্তরালে এক আশীর্বাদ। এই বেদনা, মহানবী (সাঃ)-এর প্রকৃত মৃত্যুর সময়ের মর্মস্পর্শী, হৃদয়-বিদারক বেদনা সহ্য করিবার জন্য সাহাবাগণকে প্রস্তুত করিয়াছিল। এই অভিজ্ঞতা ও প্রস্তুতি না থাকিলে নবী করীম (সাঃ)-এর ওফাতের সময় সাহাবাগণের শোক-বিহ্বলতা কাটাইয়া উথা সম্ভব হইত না।