৪১৪

‘কলিমা’ মানে একটি শব্দ একটি অনুশাসন, একটি আদেশ (মুফরাদাত)। এই কলিমা শব্দটি, ৪ঃ১৭২ আয়াতে উল্লেখিত ‘রূহ্’ শব্দের সহিত মিলিত হইয়া, স্পষ্ট ও সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে, ঈসা (আঃ) না ছিলেন আল্লাহ্, আর না ছিলেন আল্লাহ্‌র পুত্র। তাঁহার ঈশ্বরত্ব ও পুত্রত্বকে এই শব্দগুলি প্রতিষ্ঠিত করার পরিবর্তে উহাকে বরং ধূলিসাৎ করে। এই আয়াতে ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহ্‌র বাক্য বলা হইয়াছে, কারণ তাহার বাক্য ছিল সত্য প্রতিষ্ঠার সহায়ক। যে ব্যক্তি নিজের বীরত্ব ও সাহসিকতাকে সত্য প্রচারের কাজে ব্যবহার করেন, তাহাকে বলা হয় ‘সাইফুল্লাহ’ (আল্লাহ্‌র তরবারী) বা ‘আসাদুল্লাহ’ (আল্লাহ্‌র সিংহ)। তেমনিভাবে, ঈসা (আঃ)-কে ‘কলিমাতুল্লাহ’ বলা হইয়াছে, যেহেতু তিনি কোন পুরুষের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করেন নাই বরং আল্লাহ্‌র আদেশ-বাক্য সরাসরি তাঁহাকে মাতৃগর্ভে আনিয়াছে (১৯ঃ২২)। অধিকন্তু, উপরে প্রদত্ত শব্দার্থগুলি ছাড়াও, কুরআনে নিম্নলিখিত অর্থেও ‘কলিমা’ শব্দটি ব্যবহৃত হইয়াছে যথাঃ (১) চিহ্ন বা নিদর্শন (৬৬ঃ১৩; ৮ঃ৮), (২) শাস্তি (১০ঃ৯৭), (৩) পরিকল্পনা (৯ঃ৪০) (8) সুসংবাদ (৭ঃ১৩৮), (৫) আল্লাহ্‌র সৃষ্টি (১৮ঃ১১০), (৬) কেবল মুখের কথা (২৩ঃ১০১)। এই সব অর্থের কোন একটিও যীশুকে অন্যান্য নবীর চাইতে উচ্চ মর্যাদা দান করে না। তদুপরি, যীশু বা ঈসা (আঃ)-কে কুরআনে ‘কলিমা’ (শব্দ) বলা হইয়াছে মাত্র। কিন্তু মহানবী (সাঃ)-কে ‘যিকর’ (গ্রন্থ বা বক্তৃতা) বলা হইয়াছে (৬৫ঃ১১,১২) যাহা বহু বহু কলিমার সমষ্টি। বস্তুতঃ, ‘কলিমাতুল্লাহর’ অর্থ যদি আমরা আল্লাহ্‌র শব্দ বা বাক্যই ধরিয়া লই, তাহা হইলেও, খুব বেশী বলিলে আমরা এইটুকুই বলিতে পারি যে, আল্লাহ্ নিজেকে ঈসা (আঃ)-এর মাধ্যমে প্রকাশিত করিয়াছিলেন, যেমন তিনি অন্যান্য নবীর মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশিত করিয়াছেন। শব্দাবলী আর কিছুই নয়, ভাব প্রকাশের মাধ্যম মাত্র। শব্দ আমাদের সত্তার অংশ নহে, তাই ইহা সশরীরী হইতে পারে না।