‘আমি তাহাকে এবং তাহার বংশধরগণকে বিতাড়িত শয়তান হইতে তোমার আশ্রয়ে সোপর্দ করিতেছি’ মরিয়মের মাতার এই উক্তিটি বিশ্লেষণ করিতে যথেষ্ট বেগ পাইতে হয়। মরিয়মকে যদি আল্লাহ্র সেবায় নিয়োগ করার মানত পূর্ণ করার সংকল্প ঠিক থাকে, তাহা হইলে মরিয়মের মাতার জানাই ছিল যে, মরিয়ম কখনও বিবাহ করিতে পারিবে না, এমতাবস্থায় তাহার সন্তানদের জন্য দোয়া করা খাপ খায় না। ইহার সম্ভাব্য ব্যাখ্যা এই যে, মরিয়মের মাতা হান্না দিব্যদর্শনে আল্লাহ্র তরফ হইতে জানিতে পারিয়াছিলেন যে, মরিয়ম দীর্ঘজীবী হইবেন এবং তাহার একটি আদর্শ সন্তানও হইবে। এইরূপ জানিতে পারিয়াই, তিনি বিশ্ব-প্রভুর কাছে এই দোয়া করিয়াছিলেন। মরিয়মের ভবিষ্যৎ, প্রভুর হাতে সঁপিয়া দিয়া তিনি তাহাকে স্বীয় শপথ অনুযায়ী উপাসনালয়ের সেবায় সোপর্দ করিয়াছিলেন (৩ঃ৩৬, গসপেল অব দি বার্থ অব মেরী)। ইহা একটি ব্যতিক্রম ধর্মী উৎসর্গ ছিল। কেননা, এই উৎসর্গের জন্য কেবল পুরুষেরাই মনোনীত হওয়ার রীতি ছিল। মরিয়ম-মাতা স্বপ্নে এইরূপ দেখিয়াছিলেন বলিয়া মনে করা হয় যে, তাহার কন্যা মরিয়মের একটি পুত্র-সন্তান হইবে, এই কথা গসপেল অব মেরী ৩ঃ৫-এ একটু ভিন্নভাবে উল্লেখ রহিয়াছে। হান্নার প্রার্থনা – মরিয়ম ও তাহার সন্তানকে যেন শয়তানের প্রভাব হইতে আল্লাহ্ মুক্ত রাখেন – অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। সকল ধার্মিক পিতা-মাতাই সন্তানদের জন্য এই ইচ্ছা ব্যক্ত করেন এবং দোয়া করেন তাহারা যেন পবিত্র ও সৎ জীবনের অধিকারী হয়। এই প্রসঙ্গে একটি কথা লক্ষ্য করা যাইতে পারে যে, ইসলাম সকল নবীকেই সম্পূর্ণভাবে শয়তানের প্রভাব-মুক্ত বলিয়া ঘোষণা করিয়াছে। কিন্তু বাইবেল এমনকি যীশু সম্বন্ধেও এরূপ প্রভাব-মুক্তির নিরাপত্তা ঘোষণা করে নাই (মার্ক-১ঃ ১২,১৩)।