এই আয়াতে ঈসা (আঃ)-এর উলূহীয়্যতের (ঈশ্বরত্বের) অলীক মতবাদকে শক্তিশালী যুক্তি দ্বারা খণ্ডন করা হইয়াছে।এই মতবাদটি এই সূরার বিষয়াবলীর মধ্যে অন্যতম বিষয়। তাই, সূরার প্রথমেই যুক্তিযুক্তভাবে আল্লাহ্তা’লার ঐসব গুণাবলীর উল্লেখ করা হইয়াছে, যাহা ঐ মতবাদটির মূলে কুঠারাঘাত করে। এই গুণাবলী হইলঃ আল্লাহ্ চিরঞ্জীব, স্বয়ম্ভূ ও স্বনির্ভর। এই গুণগুলি প্রমাণ করে যে, আল্লাহ্র কোনও সহযোগী ও সাহায্যকারীর প্রয়োজন নাই। অপরদিকে ইহাও প্রমাণিত হয় যে, ঈসা (আঃ ) যিনি জন্ম-মৃত্যুর নিয়মের অধীন ছিলেন; যিনি চিরঞ্জীব, স্বয়ম্ভু ও স্বনির্ভর ছিলেন না, তিনি কখনও ঈশ্বর ছিলেন না। খৃষ্টানদের প্রায়শ্চিত্তবাদ, যাহা যীশুর ইশ্বরত্বের বিশ্বাস হইতে উদ্ভূত, তাহাও ধূলিসাৎ হইয়া যায়। খৃষ্টানগণ বলেন, ঈসা (আঃ) মানুষের পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য মৃত্যু বরণ করিয়াছিলেন। এই কথা যদি সত্য হয়, তাহা হইলে তিনি খোদা হইতে পারেন না, কেননা আল্লাহ্তো তিনিই যিনি কখনও মৃত্যুবরণ করেন না, সাময়িক ভাবেও না। খৃষ্টানেরা অনর্থক এই যুক্তির অবতারণা করেন যে, যীশুর মৃত্যুর অর্থ হইল, ঈশ্বর-যীশুর শারীরিক অবস্থান হইতে বিচ্ছেদ। খৃষ্টানদের বিশ্বাস মতে, ঈশ্বর-যীশু ও তাঁহার মানব-দেহ-ধারণ ছিল সাময়িক অবস্থা; অতএব, এই সাময়িক অবস্থা একদিন ভাঙ্গিয়া পড়ারই ছিল, এমন কি ক্রুশে না মরিলেও মৃত্যু হইতই। কাজেই কেবল শারীরিক বিচ্ছেদ কোন কাজেই আসিতে পারে না। অতএব, ইহা অন্য কোন মৃত্যু হইবে, যাহা তাহার পাপী শিষ্যগণকে পরিত্রাণ দিয়াছে। খৃষ্টানদের নিজস্ব মতও তাহাই। তাহারা মনে করেন, ক্রুশীয় মৃত্যুর পরে যীশু যখন দোযখে নিক্ষিপ্ত হইলেন তখন, তাঁহার যে মৃত্যু ঘটিয়াছিল, ঐ মৃত্যুই, সেই পরিত্রাণকারী মৃত্যু(প্রেরিত-২ঃ ৩১)। অতএব, মৃত্যুর ঊর্ধ্বে চিরঞ্জীব থাকা, যাহা আল্লাহ্র অন্যতম মর্যাদা, তাহা যীশুর ছিল না, বরং যীশুআক্ষরিক ভাবেও এবংরূপক ভাবেও মৃত্যু বরণ করিয়াছেন। তেমনি ভাবে, স্বয়ম্ভু ও স্বয়ম্ভর হওয়ার দিক হইতে দেখিলেও যীশুর ঈশ্বরত্ব প্রতিপন্ন হয় না। আল্লাহ্ স্বয়ম্ভু ও স্বয়ম্ভর হওয়ার কারণে, কাহারও সাহায্য তাঁহার প্রয়োজন হয় না বরং অন্যান্য সবকিছুই তাঁহার মুখাপেক্ষী ও সাহায্যপ্রার্থী হইয়া থাকে। কিন্তু যীশুর মাঝে এইসব ঐশ্বরিক গুণ ছিল না। অন্যান্য মরণশীলদের মত, তিনি মাতৃগর্ভে জন্ম নিয়াছিলেন, পানাহারের সাহায্যে বাঁচিয়া ছিলেন, দুঃখ-যন্ত্রণা ভোগ করিয়াছিলেন, নিজের দুঃখ-যন্ত্রণা হইতে মুক্তির জন্য অন্যদের প্রার্থনা কামনা করিয়াছিলেন এবং অবশেষে (খৃষ্টানদের মতে) ক্রুশে মৃত্যু বরণ করেন। বাইবেলের নূতন নিয়ম এইসব ঘটনাবলীর তথ্যে পূর্ণ। কিন্তু আল্লাহ্তা’লা, যিনি চিরঞ্জীব, স্বয়ম্ভু ও স্বনির্ভর তিনি এই সব শারীরিক সুখ-দুঃখের বহু ঊর্ধ্বে।