৩৪৪১

যেহেতু ‘লাম’ এমন একটি অব্যয় যদ্বারা আরবী বাক্য শুরু করা হয় না, সুতরাং যখন ইহা দ্বারা কোন বাক্য শুরু করা হয় তখন আয়াতটির পূর্বে একটি বাক্য বা বাক্যাংশ উহ্য রহিয়াছে মনে করিতে হইবে। উহ্য অংশটিকে পূর্বে বসাইলে, আয়াতটির মোটামুটি অর্থ দাঁড়াইবেঃ ‘হে মুহাম্মদ! তুমি আশ্চর্য বোধ করিতেছ যে, আল্লাহ্ কুরায়শদের মনে শীত-গ্রীষ্ম নির্বিশেষে সব সময়ে ভ্রমণ করার প্রতি এত অনুরাগ সৃষ্টি করিয়া রাখিয়াছেন, ইহা আল্লাহ্‌র কত বড় অনুগ্রহ! ভ্রমণের প্রতি আগ্রহকে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ এই কারণে বলা হইয়াছে যে, শীতকালে ইয়েমেনের দিকে বাণিজ্য ভ্রমণে এবং গ্রীষ্মকালে সিরীয়া-প্যালেষ্টাইনের দিকে বাণিজ্য যাত্রায় গিয়া, কুরায়শগণ খাদ্যসহ জীবনোপযোগী সকল দ্রব্যাদি মক্কায় নিয়া আসিত। এই বাণিজ্যিক আদান-প্রদান কুরায়্‌শদের মর্যাদা বৃদ্ধি করিয়াছিল, তাহাদের শহরের উন্নতি সাধন করিয়াছিল এবং তাহাদের জ্ঞান-বুদ্ধিরও বিকাশ ঘটাইয়াছিল। ইয়েমেনের ইহুদীগণের সংস্পর্শে আসিয়া এবং সিরীয়ার খৃষ্টানদের সংস্পর্শে আসিয়া তাহারা জানিতে পারিয়াছিল যে, আরব দেশে একজন বড় নবী আগমন করিবেন বলিয়া তাহাদের শাস্ত্রে ভবিষ্যদ্বাণী রহিয়াছে। কুরায়্‌শরা এতই দেশ-প্রেমিক ও কা’বা-প্রেমিক ছিল যে, তাহারা না খাইয়া মরিলেও, মক্কার ভূমি বা কা’বার গৃহ ছাড়িয়া কোথাও যাইতে প্রস্তুত ছিল না, এমন কি অস্থায়ীভাবেও না। নবী করীম (সাঃ)-এর প্রপিতামহ হাশিমের জোরালো উপদেশ ও অনুপ্রেরণায় কুরায়্‌শগণ ব্যবসা বাণিজ্যকে পেশারূপে গ্রহণ করে। ইহা তাহাদের জন্য ঐশী অনুগ্রহ ছিল যে, তাহারা ব্যবসা -ভ্রমণের মাধ্যমে অন্যান্য সকল সুবিধাপ্রাপ্তি ছাড়াও আরও একটি মহা-সুযোগ লাভ করিল যে, নিকট ভবিষ্যতে আগমনকরী মহানবী (সাঃ)-কে গ্রহণ করার মানসিক প্রস্তুতিও তাহাদের মনে দানা বাঁধিতেছিল। এই আয়াতগুলির আরও একটি সাবলীল ব্যাখ্যা আছে, যাহা প্রসঙ্গের সহিত ভালভাবেই খাপ খায়। ব্যাখ্যাটি হইল কতকটা এইরূপঃ ‘হে মুহাম্মদ! তোমার প্রভু ‘হস্তীওয়ালা’ আবরাহার সেনাবাহিনীকে এই কারণেই ধ্বংস করিয়া দিয়াছিলেন যাহাতে কুরায়্‌শদের শীত-গ্রীষ্মের বাণিজ্যিক ভ্রমণে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে কোন বিরতি না ঘটে। ইহা তাহাদের প্রতি আল্লাহ্‌র বড় অনুগ্রহ।’ এই ব্যাখ্যা যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত। কেননা, আবরাহা যদি ধ্বংস না হইত, তাহা হইলে কুরায়শগণ ঐসব দেশে ভ্রমণ করা নিশ্চয়ই বিপজ্জনক মনে করিত এবং সেই হেতু তাহাদের ভ্রমণ-স্পৃহা একেবারে স্তিমিত হইয়া পড়িত। অতএব আবরাহার ধ্বংস কুরায়শদের বাণিজ্য-ভ্রমণকেই কেবল মাত্র অব্যাহত রাখে নাই, বরং আরবের অধিবাসী সকল মানুষের তীর্থস্থান এই কা’বা তাহাদের চোখে অধিকতর পবিত্র ও সম্মানীয় হইয়া উঠিল। আর, ইহাতে কুরায়্‌শদের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বেশী উৎকর্ষতা লাভ করিল। আয়াতটির অর্থ ইহাও হইতে পারেঃ তোমার প্রভু, হাতীর মালিক, প্রচণ্ড ও দুর্দান্ত সেনাবাহিনীকে কেবলমাত্র কুরায়্‌শদিগকে বাঁচাইবার জন্য ধ্বংস করিয়া দিয়াছিলেন।