‘ডুমুর’, ‘জলপাই’, ‘সিনাই পর্বত’ এবং ‘এই নিরাপত্তার শহর’—এই গুলির কসম খাইয়া বলা হইতেছে যে, নবী করীম (সাঃ)-এর উদ্দেশ্য সফল হইবার যে দাবী এই সূরাতে উত্থাপন করা হইয়াছে তাহা নিশ্চয়ই পূর্ণ হইবে। ‘ডুমুর’ ও ‘জলপাই’ ঈসা (আঃ)-এর প্রতীক, সিনাই পর্বত মূসা (আঃ)-এর প্রতীক এবং ‘এই নিরাপত্তার শহর’ মহানবী (সাঃ)-এর প্রতীক। এই তিনটি আয়াতের মধ্যে, বাইবেলের নিম্নোক্ত কথাগুলির প্রতি ইঙ্গিত রহিয়াছে। কথাগুলি হইল, সদাপ্রভু সীনয় হইতে আসিলেন এবং সেয়ীর হইতে তাহাদের প্রতি উদিত হইলেন; এবং পারান পর্বত হইতে আপন প্রতাপ প্রকাশ করিলেন’ (দ্বিতীয় বিবরণ-৩৩ঃ২)। কোন কোন তফসীরকারকের মতে, ‘ডুমুর’ বৌদ্ধ ধর্মের জন্য, ‘জলপাই’ খৃষ্টান ধর্মের জন্য, ‘সিনাই পর্বত’ ইহুদী ধর্মের জন্য এবং ‘এই নিরাপত্তার শহর’ ইসলামের মহানবী (সাঃ)-এর জন্য ব্যবহৃত হইয়াছে। এই প্রতীকগুলির একটি ব্যাখ্যা ইহাও করা হইয়াছে যে, এক একটি প্রতীক এক একটি বিশেষ ঐতিহাসিক সময়কে নির্দেশ করিয়াছে। মানুষের নৈতিক উন্নয়নের ইতিহাস সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণে এই ব্যাখ্যাই মনে হয় সর্বোত্তম। ইহাতে আদম (আঃ)-এর যুগকে ডুমুর দ্বারা, নূহ (আঃ)-এর যুগকে ‘জলপাই’ দ্বারা, মূসা (আঃ)-এর যুগকে ‘সিনাই পর্বত’ দ্বারা এবং ‘এই নিরাপত্তার শহর’ দ্বারা মহানবী (সাঃ)-এর ইসলামী সভ্যতার যুগকে চিহ্নিত করা হইয়াছে। এই ব্যাখ্যা কুরআন ও বাইবেল দ্বারা সমর্থিত। বর্ণিত আছে যে, আদম ও হাওয়া যখন নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণ করিলেন এবং নগ্ন হইয়া পড়িলেন তখন ডুমুরের পাতা দ্বারা নগ্নতা ঢাকিলেন (আদি পুস্তক-৩ঃ৭)। নূহ (আঃ) সম্বন্ধে বর্ণিত আছে, এবং কপোতটি সন্ধ্যাকালে তাহার নিকটে ফিরিয়া আসিল। আর দেখ, তাহার চঞ্চুতে জিত বৃক্ষের একটি নবীন পত্র ছিল, ইহাতে নোহ বুঝিলেন, ভূমির উপরে জল হ্রাস পাইয়াছে’ (আদি পুস্তক-৮ঃ১১)। ইহা স্বীকৃত সত্য যে, মূসা (আঃ) সিনাই পর্বতে শরীয়াতের বাণী লাভ করিয়াছিলেন। আর ইহাও সকলের জানা যে, ইসলামের পবিত্র জন্মভূমি আবহমান কাল হইতে আজ পর্যন্ত ‘শান্তি ও নিরাপত্তার নগরী’ বলিয়া পরিচিত ও প্রমাণিত হইয়া আসিতেছে। এই চারটি যামানার মধ্য দিয়া অতিক্রম করতঃ মানুষ সভ্যতার বর্তমান স্তরে উপনীত হইয়াছে। আদমের যামানায় মানুষের উন্নতি ও সভ্যতার প্রথম সোপান রচিত হইয়াছিল। নূহ (আঃ) ছিলেন শরীয়াতের স্থপতি, মূসা (আঃ)-এর যামানায় বিস্তারিতভাবে শরীয়াত অবতীর্ণ হয় এবং মহানবী (সাঃ)-এর যামানায় ঐশী বিধান সর্বতোভাবে পূর্ণতা প্রাপ্ত হইয়াছে, যাহার ফলে মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করিয়াছে। এই ব্যাখ্যা সত্বেও ‘ডুমুর’ মুসায়ী শরীয়াতকে এবং ‘জলপাই’ ইসলামী শরীয়াতকে বুঝাইতে পারে, আর এই দুইটি প্রতীকি কসম বা সাক্ষ্যকে সমান্তরালভাবে দেখানোর জন্য সিনাই পর্বত ও নিরাপত্তার নগরীর নাম লওয়া হইয়াছে।