৩৩৫৯-ক

আয়াতটির অর্থ হইলঃ মহাকাশজনিত বস্তু-নিচয় যথা চন্দ্র, সূর্য ইত্যাদি নিজ নিজ গুণাবলীকে আল্লাহ্‌র সৃষ্ট জীবের সেবায় নিয়োজিত রাখিয়াছে (এই কথার ইঙ্গিত এই সূরার দশম আয়াতে রহিয়াছে)। ইহারা এই সাক্ষ্য দান করে যে, মানুষকেও এই সব গুণাবলী দ্বারা, বরং আরও উচ্চতর গুণাবলী দ্বারা ভূষিত করা হইয়াছে। বস্তুতঃ মানুষ একটি ক্ষুদ্র-বিশ্ব বিশেষ। বহির্বিশ্বে যাহাকিছু আছে, উহার সব কিছুই ক্ষুদ্রাকারে মানুষের মধ্যে রহিয়াছে। সূর্যের মতই মানুষও পৃথিবীকে জ্যোতিঃ প্রদান করে এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আলো দ্বারা বিশ্বকে আলোকিত করিয়া থাকে। চন্দ্রের মতই, মানুষ মূল উৎস হইতে আলো, অনুপ্রেরণা ও ঐশী-বাণী আহরণ করিয়া অন্ধকারাচ্ছন্নদের মধ্যে বিতরণ করে। দিনের মত উজ্জ্বল হইয়া সে অপরকে সত্য ও ন্যায়ের পথ প্রদর্শন করে। রাত্রির মত সেও অন্যের দোষ ঢাকিয়া রাখে, অন্যের বোঝা লাঘব করে এবং ক্লান্ত-শ্রান্তদের শ্রান্তি-বিনোদন করে। আকাশের মত সে দুঃখ-ক্লিষ্ট আত্মাকে আশ্রয় দেয় এবং শান্তিদায়িনী বারিধারা বর্ষণ করিয়া প্রাণহীন পৃথিবীতে প্রাণের স্পন্দন জাগাইয়া তোলে। মাটীর পৃথিবীর মত বিনয় ও নম্রতার সহিত সে মানব-হিতৈষণার খাতিরে নিজে সকলের পদতলে পিষ্ট হইতেও কুণ্ঠিত হয় না। তাঁহার পবিত্রকৃত আত্মা হইতে সত্য ও জ্ঞানের বহুবিধ বৃক্ষ জন্মায়, যাহার ছায়া ও ফল-ফলাদি বিশ্বকে আপ্যায়িত করে। ধর্মসাধকেরা এবং ঐশী সংস্কারকগণ এইরূপই হইয়া থাকেন। এই চিত্রই তাঁহাদের বিশ্বরূপ। ইহাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বপ্রধান হইলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (আল্লাহ্‌র অনন্ত চিরশান্তি ও চিরকল্যাণ তাঁহার উপর বর্ষিত হউক)।